বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিBengali

ইন্টারনেট কী, গুরুত্ব ও কাজের ধরণ – সহজ ভাষায়

ইন্টারনেট এখন মানব জীবনের অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী, আর এর অন্তর্নিহিত প্রযুক্তি বুঝলেই খুলে যাবে আধুনিক বিশ্বের অসাধারণ এক পর্দা!

আজকের যুগে ইন্টারনেট ছাড়া আধুনিক জীবন কল্পনাই করা যায় না। তথ্য থেকে বিনোদন, যোগাযোগ থেকে ব্যবসা, সবকিছুই এখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে হয়ে থাকে। কিন্তু আপনি কি জানেন, ইন্টারনেট আসলে কী, কীভাবে এটি কাজ করে এবং কেন এটি এত গুরুত্বপূর্ণ? 

এই আর্টিকেলে আমরা সহজ ও সরল ভাষায় ইন্টারনেটের মৌলিক ধারণা, কাজের পদ্ধতি, ইতিহাস, ব্যবহার, ও ভবিষ্যৎ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। ইন্টারনেট সম্পর্কে আপনার সব প্রশ্নের উত্তর আছে আমাদের এই গাইডে।

ইন্টারনেট কি বা ইন্টারনেট কাকে বলে?

ইন্টারনেট হলো একটি বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা যেখানে কোটি কোটি কম্পিউটার, সার্ভার ও বিভিন্ন ডিভাইস একে অপরের সঙ্গে যুক্ত থাকে। এটি একটি ডিজিটাল মহাসড়কের মতো যার মাধ্যমে তথ্য, ছবি, অডিও, ভিডিও এবং নানা ধরনের ডেটা এক স্থান থেকে আরেক স্থানে পাঠানো যায়।

সহজভাবে ইন্টারনেট বলতে বোঝায় এমন একটি প্রযুক্তি যার মাধ্যমে আপনি ওয়েবসাইট দেখতে, ই-মেইল পাঠাতে, ভিডিও কল করতে বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যুক্ত থাকতে পারেন – যেকোনো সময়, যেকোনো জায়গা থেকে।


ইন্টারনেটের প্রধান বৈশিষ্ট্য

  • বৈশ্বিক সংযোগ: ইন্টারনেট বিশ্বজুড়ে মানুষকে একত্রে সংযুক্ত করে সীমাহীন যোগাযোগের সুযোগ সৃষ্টি করে।
  • তথ্যের অবাধ প্রবাহ: যে কেউ সহজেই যেকোনো ধরনের তথ্য খুঁজে পেতে বা শেয়ার করতে পারে।
  • দ্রুততা ও তাৎক্ষণিকতা: সেকেন্ডেই ই-মেইল পাঠানো, ভিডিও দেখা বা ফাইল ডাউনলোড করা সম্ভব।
  • বহুমুখী ব্যবহার: শিক্ষা, ব্যবসা, স্বাস্থ্যসেবা, বিনোদন, সরকারি সেবা, সবখানেই ইন্টারনেট অপরিহার্য।
  • অন্তর্জাল ভিত্তিক সেবা: ইন্টারনেটের মাধ্যমে ই-কমার্স, ক্লাউড স্টোরেজ, ভিডিও স্ট্রিমিংসহ নানা ধরনের অনলাইন সেবা পাওয়া যায়।
  • ইন্টারঅ্যাকটিভ কমিউনিকেশন: ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা সহজেই মেসেজ, ভিডিও কল বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেন।

ইন্টারনেট কীভাবে কাজ করে? – ধাপে ধাপে ব্যাখ্যা


ইন্টারনেটের কাজ করার পদ্ধতি কী

ইন্টারনেট দেখতে যত সহজ এর কাজের পদ্ধতি ততটাই জটিল এবং চমকপ্রদ। আপনি যখন একটি ওয়েবসাইটে ঢোকেন বা কাউকে মেসেজ পাঠান তখন পেছনে বহু প্রযুক্তি একসঙ্গে কাজ করে। এখন আমরা ধাপে ধাপে বুঝে নেব এই বিশাল প্রযুক্তি কীভাবে কাজ করে এবং এর প্রতিটি ধাপে কী ঘটছে।

১. ডেটা, সার্ভার ও ক্লায়েন্ট

  • ডেটা: ইন্টারনেটে আপনি যা কিছু পাঠান বা গ্রহণ করেন যেমন ছবি, টেক্সট, ভিডিও, এগুলো সবই “ডেটা”।
  • ক্লায়েন্ট: আপনি যখন মোবাইল বা কম্পিউটারে ব্রাউজ করেন, তখন আপনার ডিভাইসটি ক্লায়েন্ট হিসেবে কাজ করে।
  • সার্ভার: ওয়েবসাইট বা অ্যাপ্লিকেশনের মূল তথ্য একটি শক্তিশালী কম্পিউটারে থাকে যাকে বলা হয় সার্ভার। এটি ক্লায়েন্টের অনুরোধ অনুযায়ী তথ্য পাঠায়।

উদাহরণ: আপনি যদি Google.com লিখেন, তখন আপনার ফোন (ক্লায়েন্ট) গুগলের সার্ভার থেকে ডেটা চায়।

২. IP ঠিকানা ও DNS কীভাবে কাজ করে

  • IP ঠিকানা: প্রতিটি ডিভাইস বা সার্ভারের একটি নির্দিষ্ট সংখ্যা থাকে যেটি ইন্টারনেটে ওই ডিভাইস বা সার্ভারের “ঠিকানা” হিসেবে কাজ করে। একেই বলা হয় IP ঠিকানা, উদাহরণ: 192.168.1.1
  • DNS (Domain Name System): আপনি হয়ত google.com মনে রাখতে পারেন কিন্তু কম্পিউটার তা বোঝে না। DNS সিস্টেম তাই প্রতিটি নামকে IP ঠিকানায় রূপান্তর করে।

সহজ ভাষায়, DNS এমন একটি সিস্টেম যা নাম দেখে IP ঠিকানা খুঁজে বের করে।

৩. ব্রাউজার কীভাবে ওয়েবপেজ লোড করে

  • মনে করুন, আপনি ব্রাউজারে www.spherechronicles.net টাইপ করলেন।
  • ব্রাউজার তখন DNS এর মাধ্যমে এই ডোমেইনের IP খুঁজে পায়।
  • সেই IP ঠিকানায় একটি অনুরোধ (request) পাঠানো হয়।
  • তখন ওয়েবসাইটের সার্ভার HTML, CSS ও JavaScript কোড পাঠায়।
  • ব্রাউজার এই কোডগুলিকে প্রসেস করে এবং আপনাকে বোধগম্য একটি পূর্ণ ওয়েবপেজ দেখায়।

প্রতিবার আপনি যখন কোনো ওয়েবসাইটে ঢোকেন, ঠিক এই পদ্ধতিতেই তথ্য আদান-প্রদান হয়।


ইন্টারনেটের মূল উপাদান ও প্রযুক্তি


ইন্টারনেট ব্যবহার করতে আমরা কেবল মোবাইল বা কম্পিউটার দেখি, কিন্তু এর পেছনে কাজ করে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি ও উপাদান। এগুলো না থাকলে ইন্টারনেট সংযোগ ও তথ্য আদান-প্রদান সম্ভব হতো না।

  • ISP (ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার): ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য আমাদের প্রথম সংযোগদাতা হলো ISP যেমন বাংলালিংক, গ্রামীণফোন, বিটিসিএল বা কিউবি। তারা মূল ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক থেকে আপনার বাসা বা অফিসে সংযোগ এনে দেয়।
  • রাউটার: ISP-এর সংযোগ আমরা রাউটারের মাধ্যমে ঘরে বা অফিসে বিভিন্ন ডিভাইসে ভাগ করি। এটি ওয়াই-ফাই তৈরি করে যাতে আপনি তার ছাড়াই ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন।
  • ক্যাবল: ইন্টারনেট সংযোগ প্রধানত ফাইবার অপটিক বা কো-অ্যাক্সিয়াল ক্যাবলের মাধ্যমে আসে। এই তারগুলো দ্রুতগতির ডেটা পরিবহণ নিশ্চিত করে।
  • ওয়্যারলেস সংযোগ: এখন অনেক জায়গায় মোবাইল নেটওয়ার্ক বা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ওয়্যারলেস ইন্টারনেট সংযোগও ব্যবহার করা হচ্ছে, বিশেষ করে গ্রাম বা দুর্গম এলাকায়।

ক্লাউড কম্পিউটিং ও ডেটা সেন্টার

  • ক্লাউড কম্পিউটিং: ক্লাউড মানে হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্য সংরক্ষণ ও প্রসেসিং। আপনি যখন গুগল ড্রাইভ বা ড্রপবক্সে ফাইল রাখেন তা কোনো এক নির্দিষ্ট সার্ভারে না থেকে “ক্লাউডে” থাকে, যা আপনি যেকোনো জায়গা থেকে অ্যাক্সেস করতে পারেন।
  • ডেটা সেন্টার: ক্লাউড বা ওয়েবসাইটের মূল তথ্য থাকে ডেটা সেন্টারে, বিশাল বিশাল ভবন যেখানে হাজার হাজার সার্ভার চলে সারাক্ষণ। এখান থেকেই আপনার অনুরোধ অনুযায়ী ডেটা পাঠানো হয়।

ইন্টারনেটের ইতিহাস – সংক্ষেপে একটি ঝলক


ইন্টারনেটের আজকের রূপ এক দিনে গড়ে ওঠেনি। এটি বহু বছরের গবেষণা, উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতির ফল। এক সময় শুধু সামরিক ও অ্যাকাডেমিক প্রয়োজনে সীমাবদ্ধ থাকলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি পুরো বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিতে পরিণত হয়েছে। চলুন সংক্ষেপে জেনে নিই ইন্টারনেটের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ধাপগুলো।

  • ১৯৬২: মনোবিজ্ঞানী ও কম্পিউটার বিজ্ঞানী জে.সি.আর. লিকলাইডার “ইন্টারগ্যালাকটিক কম্পিউটার নেটওয়ার্ক” ধারণা দেন, এটি একটি দূরদর্শী বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ছিল যা ইন্টারনেটের ভিত্তি স্থাপন করে।
  • ১৯৬৫: এমআইটি-তে লরেন্স রবার্টস টেলিফোন লাইনের মাধ্যমে দুটি কম্পিউটার সংযুক্ত করে প্রথম Wide Area Network (WAN) পরীক্ষাটি চালান।
  • ১৯৬৯: ARPANET চালু হয় যা ছিল পৃথিবীর প্রথম কার্যকর প্যাকেট-সুইচিং নেটওয়ার্ক।
  • ১৯৭১: রে টমলিনসন ইতিহাসে প্রথমবার ই-মেইল প্রেরণ করেন।
  • ১৯৭৪: ভিনটন সার্ফ ও বব কান TCP নামক একটি নতুন প্রোটোকল প্রস্তাব করেন এবং প্রথমবারের মতো “ইন্টারনেট” শব্দটি ব্যবহৃত হয়।
  • ১৯৭৮: TCP/IP প্রোটোকলের উদ্ভব ঘটে যার মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে নেটওয়ার্ক সংযুক্ত করা সহজ হয় এবং ইন্টারনেট একটি অভিন্ন কাঠামো পায়।
  • ১৯৮৩: ARPANET-এ TCP/IP প্রোটোকল বাধ্যতামূলকভাবে গৃহীত হয়।
  • ১৯৮৪: Domain Name System (DNS) চালু হয়, ফলে “.com”, “.org”, “.net” ইত্যাদি সহজ ও পরিচিত ঠিকানা ব্যবহারের সুযোগ করে দেয়।
  • ১৯৮৫: Symbolics.com ইন্টারনেটের ইতিহাসে প্রথম রেজিস্টার করা ডোমেইন নাম।
  • ১৯৮৯: টিম বার্নার্স-লি World Wide Web (WWW) উদ্ভাবন করেন।
  • ১৯৯০: টিম বার্নার্স-লি প্রথম ওয়েব ব্রাউজার ও ওয়েব সার্ভার তৈরি করে ওয়েবসাইট ও কনটেন্ট শেয়ারিং যুগের সূচনা করেন; একই বছর ARPANET বন্ধ করে দেওয়া হয়।
  • ১৯৯৩: Mosaic নামে প্রথম গ্রাফিক্যাল ওয়েব ব্রাউজার চালু হয় যা ওয়েব ব্রাউজিং সহজ ও জনপ্রিয় করে তোলে।
  • ১৯৯৮: গুগল প্রতিষ্ঠিত হয় ও সার্চ ইঞ্জিন জগতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনে।
  • ২০০৭: আইফোন বাজারে আসে, মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারে নতুন যুগের সূচনা করে।
  • ২০১০-এর দশক: ক্লাউড কম্পিউটিং, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও স্ট্রিমিং সেবার ব্যাপক বিস্তার ঘটে।

ইন্টারনেটের ব্যবহার ও গুরুত্ব


আজকের দিনে ইন্টারনেট আমাদের ব্যক্তিগত, পেশাগত এবং সামাজিক জীবনে অসংখ্য কাজে সাহায্য করে। তথ্য খোঁজা থেকে শুরু করে ব্যবসা পরিচালনা সবকিছুই এখন ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরশীল।

দৈনন্দিন জীবনে ইন্টারনেটের ব্যবহার

  • যোগাযোগ: WhatsApp, Messenger বা ইমেইলের মাধ্যমে মুহূর্তেই যেকোনো প্রান্তে বার্তা পাঠানো যায়।
  • খবর ও তথ্য: অনলাইন সংবাদপত্র, গুগল সার্চ বা ইউটিউব থেকে মুহূর্তে আমরা যেকোনো তথ্য পেয়ে যাই।
  • বিল পরিশোধ ও ব্যাংকিং: মোবাইল ব্যাংকিং বা অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে ঘরে বসেই বেশিরভাগ বিল পরিশোধ ও অর্থ লেনদেন করা যায়।
  • কেনাকাটা: ই-কমার্স সাইটের মাধ্যমে ঘরে বসে প্রয়োজনীয় পণ্য অর্ডার করা যায়।

ব্যবসা, শিক্ষা ও বিনোদনে ইন্টারনেটের ভূমিকা

  • ব্যবসা: ছোট উদ্যোক্তা থেকে বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত সবাই এখন ওয়েবসাইট, সোশ্যাল মিডিয়া বা অনলাইন মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করছে। রিমোট কাজও দেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
  • শিক্ষা: অনলাইন ক্লাস, ইউটিউব টিউটোরিয়াল, ডিজিটাল লাইব্রেরি — শিক্ষার ধরনই বদলে দিয়েছে ইন্টারনেট। গ্রামাঞ্চলেও শিক্ষার সুযোগ বাড়ছে।
  • বিনোদন: OTT প্ল্যাটফর্ম, ভিডিও শেয়ারিং সাইট ও গেমিং সার্ভিসের মাধ্যমে ইন্টারনেট হয়ে উঠেছে বিনোদনের বড় উৎস।

ইন্টারনেট ব্যবহারে নিরাপত্তা ও সতর্কতা


ইন্টারনেট যেমন সুবিধা এনে দিয়েছে তেমনি এর সঙ্গে রয়েছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা ঝুঁকি। সচেতন না হলে ব্যক্তিগত তথ্য চুরি, হ্যাকিং বা অনলাইন প্রতারণার শিকার হওয়া সম্ভব। তাই ইন্টারনেট ব্যবহারে কিছু সতর্কতা মেনে চলা জরুরি।

ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা

আপনার ব্যক্তিগত তথ্য (যেমন: নাম, ফোন নম্বর, ঠিকানা, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, পাসওয়ার্ড) অনলাইনে শেয়ার করার সময় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

  • জটিল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন: সহজ ও সাধারণ পাসওয়ার্ডের বদলে বড়, অক্ষর, সংখ্যা ও চিহ্ন মিশ্রিত পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন।
  • দ্বৈত-ধাপে যাচাই (Two-Factor Authentication): যে সব অ্যাপ বা সাইটে সম্ভব সেখানে এই সুরক্ষা ব্যবস্থা চালু রাখুন।
  • বিশ্বস্ত ওয়েবসাইটে তথ্য দিন: সন্দেহজনক বা অজানা সাইটে ব্যক্তিগত তথ্য না দেওয়াই ভালো।
  • সাবধান থাকুন ফিশিং থেকে: ই-মেইল বা মেসেজের মাধ্যমে আসা অচেনা লিংকে ক্লিক করার আগে যাচাই করে নিন।

সাইবার নিরাপত্তা ও ঝুঁকি

ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় বিভিন্ন ধরনের সাইবার হুমকির মুখোমুখি হতে পারেন, যেমন:

  • হ্যাকিং: আপনার অ্যাকাউন্ট বা ডিভাইস হ্যাকারদের নিয়ন্ত্রণে চলে যেতে পারে।
  • ভাইরাস ও ম্যালওয়্যার: সন্দেহজনক ফাইল ডাউনলোড করলে ডিভাইস ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
  • অনলাইন প্রতারণা: লোভনীয় অফার বা লটারির লোভ দেখিয়ে প্রতারকরা আপনার তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে।

সতর্কতা কীভাবে বজায় রাখবেন

  • ডিভাইসে সবসময় একটি আপডেটেড অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করুন
  • নিয়মিত সফটওয়্যার ও অ্যাপ আপডেট করুন
  • পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবহারে সাবধান থাকুন
  • সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অতিরিক্ত ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ এড়িয়ে চলুন

ভবিষ্যতের ইন্টারনেট: কী কী পরিবর্তন আসছে


প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতির ফলে ইন্টারনেটের ভবিষ্যৎ হবে আরও স্মার্ট, দ্রুত এবং বাস্তব অভিজ্ঞতার কাছাকাছি। 5G, ইন্টারনেট অব থিংস (IoT), এবং মেটাভার্স – এসব প্রযুক্তি ইন্টারনেট ব্যবহারের ধরন পাল্টে দেবে। ভবিষ্যতের ইন্টারনেট শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়, বরং এটি হবে একটি ইন্টেলিজেন্ট প্ল্যাটফর্ম, যেখানে জীবনযাত্রা, ব্যবসা, শিক্ষা এবং বিনোদন সব কিছু আরও বেশি সংযুক্ত ও গতিশীল হবে।

৫জি, আইওটি ও মেটাভার্স

  • 5G প্রযুক্তি: 5G ইন্টারনেট অনেক বেশি গতিসম্পন্ন ও কম লেটেন্সির সংযোগ দেবে। এর ফলে লাইভ ভিডিও স্ট্রিমিং, গেমিং, টেলিমেডিসিন এবং অটোনোমাস গাড়ি চালনার মতো প্রযুক্তি সহজ ও নির্ভরযোগ্য হবে।
  • ইন্টারনেট অব থিংস (IoT): IoT প্রযুক্তির মাধ্যমে বাসা, অফিস, যানবাহন এমনকি কৃষি ক্ষেত্রেও বিভিন্ন ডিভাইস ইন্টারনেটের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে। এতে স্মার্ট হোম, স্মার্ট শহর এবং আরও কার্যকর জীবনযাত্রার পথ খুলবে।
  • মেটাভার্স: মেটাভার্স হচ্ছে ভার্চুয়াল ও বাস্তব জগতের সংমিশ্রণ যেখানে আপনি থ্রিডি ভার্চুয়াল পরিবেশে ঘুরে বেড়াতে, কাজ করতে ও কেনাকাটা করতে পারবেন। এটি ইন্টারনেটের এক নতুন যুগের সূচনা করবে।

বাংলাদেশে ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

  • 5G পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে এবং বাণিজ্যিক ব্যবহারও দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে।
  • ই-কমার্স, ফ্রিল্যান্সিং, অনলাইন শিক্ষা বিস্তারের ফলে দেশের তরুণ প্রজন্ম ডিজিটাল অর্থনীতিতে যুক্ত হচ্ছে।
  • স্মার্ট বাংলাদেশ রূপকল্প বাস্তবায়নে সরকার ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নয়নে জোর দিচ্ছে।
  • রোবটিক্স, এআই ও বিগ ডেটা বিশ্লেষণে আগ্রহ বাড়ছে যা ভবিষ্যতে ইন্টারনেটভিত্তিক নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করবে।

নিষ্কর্ষ


নিশ্চিতভাবেই, ইন্টারনেট আমাদের জীবনের অপরিহার্য অংশে পরিণত হয়েছে। এটি তথ্যের সমুদ্রে ভাসিয়ে দেয়, যোগাযোগকে সহজতর করে এবং শিক্ষা, ব্যবসা ও বিনোদনের নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে। তবে এই অসাধারণ সুবিধাগুলোর পাশাপাশি সাইবার নিরাপত্তার দিকেও বিশেষ নজর রাখা জরুরি। সঠিক ব্যবহার ও সতর্কতা অবলম্বনে ইন্টারনেট আমাদের জীবনে বিপুল সম্ভাবনার সূচনা করতে পারে। তাই ইন্টারনেটের জ্ঞান অর্জন ও সুরক্ষিত ব্যবহারে সচেতন হওয়াই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।


প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQs)


ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য কী ধরনের ডিভাইস লাগে?

কম্পিউটার, স্মার্টফোন, ট্যাবলেটসহ যেকোনো ইন্টারনেট সক্রিয় ডিভাইস ব্যবহার করা যায়।

ইন্টারনেটের গতি বাড়ানোর জন্য কী কী করা যায়?

রাউটার ঠিকঠাক স্থাপন, ব্যান্ডউইথ অপ্টিমাইজেশন, এবং অনাবশ্যক ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপ বন্ধ করার মাধ্যমে গতি বাড়ানো যায়।

ইন্টারনেট ছাড়া কি অনলাইনে কাজ করা সম্ভব?

না, ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়া অনলাইনে কাজ করা সম্ভব নয়, কারণ এটি ডেটা আদান-প্রদান নির্ভর।

ইন্টারনেট ব্যবহার করার জন্য কি কোনো খরচ লাগে?

হ্যাঁ, সাধারণত ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারীকে মাসিক বা ব্যবহারভিত্তিক চার্জ দিতে হয়।

Tasnia Afroz

Tasnia Afroz

Tasnia Afroz is an Associate Editor of The Sphere Chronicles. She is a passionate writer of Bengali Language with a deep interest in the intersection of technology and culture. As a key contributor to The Sphere Chronicles, she explores a wide range of topics and crafts stories that inform, inspire, and engage our audience.

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button