বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

জীব কাকে বলে? জীব ও জড় বস্তুর মধ্যে পার্থক্য কী

পৃথিবীতে আমাদের চারপাশে থাকা প্রতিটি বস্তুকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়, জীব এবং জড়। কিন্তু জীব কি? জীব কাকে বলে? জীব ও জড় বস্তুর মধ্যে পার্থক্য কী? প্রশ্নগুলোর উত্তর জানতে হলে আমাদের প্রথমেই বুঝতে হবে জীবের বৈশিষ্ট্য এবং জীবিত ও অজীব বস্তুর মধ্যে মৌলিক পার্থক্যগুলো। এই আর্টিকেলে আমরা জীব, জড় পদার্থ, তাদের বৈশিষ্ট্য, এবং জীব ও জড়ের মধ্যে ৫টি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণের মাধ্যমে পরিষ্কারভাবে পার্থক্য তুলে ধরবো।

জীব কাকে বলে?

জীব হলো এমন একটি সত্তা বা বস্তু যার মধ্যে নিজস্ব জীবন প্রক্রিয়া রয়েছে। জীব জন্ম নেয়, বৃদ্ধি পায়, চলাচল করে, শ্বাস নেয়, পরিবেশের সাথে প্রতিক্রিয়া দেখায় এবং প্রজনন করে। জীবের মধ্যে কোষ থাকে যা তার জীবনীশক্তি পরিচালনা করে।

সাধারণভাবে, যে সব বস্তু নিজস্ব শক্তি ব্যবহার করে বেঁচে থাকে এবং নির্দিষ্ট জীবনচক্র অনুসরণ করে তাদেরই জীব বলা হয়।

জীবের প্রধান বৈশিষ্ট্য:

  • বৃদ্ধি: জীব নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আকার ও আয়তনে বড় হয়।
  • শ্বাস-প্রশ্বাস: পরিবেশ থেকে অক্সিজেন বা অন্যান্য গ্যাস গ্রহণ করে এবং শক্তি উৎপন্ন করে।
  • প্রজনন: নিজস্ব প্রজাতির মধ্যে বংশবৃদ্ধি করতে সক্ষম।
  • পরিবেশের প্রতি প্রতিক্রিয়া: জীব চারপাশের পরিবর্তনের প্রতি প্রতিক্রিয়া দেখায়, যেমন আলো, শব্দ বা তাপের প্রতি সাড়া দেওয়া।
  • খাদ্য গ্রহণ ও শক্তি উৎপাদন: খাদ্য গ্রহণ করে এবং তা থেকে শক্তি সংগ্রহ করে।
  • চলাচল: অনেক জীব নিজে থেকে স্থান পরিবর্তন করতে পারে বা আভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সরাতে পারে।
  • বর্জ্য নিষ্কাশন: দেহের অভ্যন্তরীণ বিপাক প্রক্রিয়ার ফলে উৎপন্ন বর্জ্য পদার্থ নির্দিষ্ট একটি মাধ্যমে নির্গত করে।

এই সমস্ত বৈশিষ্ট্য মিলেই আমরা বুঝি জীব কাকে বলে এবং কীভাবে এটি জড় বস্তুর থেকে আলাদা।


সজীব বস্তু বনাম জীব


অনেকে “সজীব বস্তু” আর “জীব” শব্দ দুইটিকে প্রায় একইভাবে ব্যবহার করলেও আসলে এদের মধ্যে সামান্য একটা পার্থক্য বিদ্যমান।

বিষয়সজীব বস্তুজীব
সংজ্ঞাযে সব বস্তু জীবনের লক্ষণ বহন করে, তাদের সজীব বস্তু বলে।এমন স্বতন্ত্র সত্তা যা নিজের জীবনচক্র পরিচালনা করে।
গঠনকোষ দ্বারা গঠিত, জীবিত বলেই বিভিন্ন জীবনের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে।এক বা একাধিক কোষ নিয়ে গঠিত সম্পূর্ণ প্রাণী বা জীবিত সত্তা।
উদাহরণগাছের একটি পাতা (যদি জীবিত হয়), জীবিত দেহের কোনো অঙ্গ, ব্যাকটেরিয়ামানুষ, গাছ, পশু, পাখি, মাছ, ব্যাকটেরিয়া
সম্পূর্ণতাসবসময় পুরো জীবনধারার প্রতিফলন ঘটায় না, কারণ কোনো একটি নির্দিষ্ট অংশও সজীব হতে পারে।জীবনচক্রের সমস্ত বৈশিষ্ট্য (জন্ম, বৃদ্ধি, প্রজনন, মৃত্যু) পূর্ণভাবে দেখা যায়।
স্বাধীনতাকখনও কখনও মূল দেহের উপর নির্ভরশীল (যেমন: গাছের পাতা)।সাধারণত স্বাধীনভাবে জীবন পরিচালনা করে।

সংক্ষেপে:

  • জীব কাকে বলে তা সংক্ষেপে বললে, “জীব হলো একটি সম্পূর্ণ জীবনসম্পন্ন সত্তা”।
  • সজীব বস্তু কোনো জীবিত বস্তু বা জীবের অংশ, যা এখনো জীবনের বৈশিষ্ট্য বহন করছে।

জড় পদার্থ কাকে বলে?


জড় কাকে বলে, এ প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে আগে বুঝতে হবে, জড় বস্তু কী। জড় বস্তু হলো এমন বস্তু যাদের কোনো জীবনচক্র নেই এবং যারা নিজস্বভাবে কোনো প্রকার শ্বাস-প্রশ্বাস, বৃদ্ধি, চলন, বা প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করে না। এরা প্রাণহীন, স্থির এবং বাহ্যিক শক্তি ছাড়া নিজেরা কোনো কাজ সম্পাদন করতে পারে না।

পাথর, জল, বায়ু, মাটি ইত্যাদি উদাহরণ হিসেবে ধরা যায়, যেগুলো প্রাণের কোনো লক্ষণ প্রদর্শন করে না।

জড় বস্তুর প্রধান বৈশিষ্ট্য:

  • বৃদ্ধি নেই: জড় বস্তু নিজে নিজে আকার বা গঠন পরিবর্তন করে না।
  • প্রতিক্রিয়া নেই: বাহ্যিক পরিবেশের পরিবর্তনে এরা সচেতনভাবে কোন সাড়া দেয় না।
  • জীবনচক্র নেই: জড় বস্তুর জন্ম, বৃদ্ধি এবং মৃত্যু নেই।
  • শ্বাস-প্রশ্বাস নেই: এরা অক্সিজেন বা অন্য গ্যাস গ্রহণ বা ব্যবহার করে না।
  • প্রজনন নেই: জড় বস্তু নিজের অনুরূপ আরেকটি বস্তু তৈরি করতে পারে না।
  • নিজস্ব শক্তি ব্যবহার করে চলাচল করতে পারে না: বাহ্যিক শক্তি প্রয়োগ না করলে জড় বস্তু স্থির থাকে।

জীব ও জড়ের পার্থক্য


জীব ও জড়ের মধ্যে পার্থক্য স্পষ্টভাবে বোঝা যায় তাদের মৌলিক বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে। এই বৈশিষ্ট্যগুলো জীবের স্বতন্ত্র কার্যপ্রক্রিয়া এবং জড় বস্তুর স্থিরতা নির্ধারণ করে।

বিষয়জীবজড় বস্তু
বৃদ্ধিনিজস্বভাবে বৃদ্ধি পায়বাহ্যিক উপাদানের কারণে আকার বাড়তে পারে, নিজে থেকে বৃদ্ধি পায় না
চলনঅনেক জীব নিজের শক্তি দিয়ে চলাচল করতে পারেবাহ্যিক শক্তি ছাড়া চলাচল করে না
প্রতিক্রিয়াপরিবেশের পরিবর্তনে প্রতিক্রিয়া দেখায়পরিবেশের প্রতি কোনো সচেতন প্রতিক্রিয়া নেই
প্রজনননিজস্ব প্রজাতির বংশবৃদ্ধি হয়নিজের অনুরূপ আরেকটি তৈরি করতে পারে না
শ্বাস-প্রশ্বাসশ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে শক্তি উৎপন্ন করেশ্বাস-প্রশ্বাসের কোনো প্রক্রিয়া নেই

জীব ও জড়ের মধ্যে ৫ টি উদাহরণ


জীবের উদাহরণ:

  • গাছ: নিজে খাদ্য তৈরি করে, বৃদ্ধি পায়, ও প্রজনন করে।
  • পশু: চলাচল করে, খাদ্য গ্রহণ করে এবং বংশবৃদ্ধি করে।
  • মানুষ: চিন্তাশক্তি ও অনুভূতির মাধ্যমে জীবন পরিচালনা করে।
  • ব্যাকটেরিয়া: এককোষী জীব, যারা দ্রুত প্রজনন করে এবং প্রতিক্রিয়া দেখায়।
  • মাছ: পানিতে বসবাস করে, শ্বাস নেয় ও চলাচল করে।

জড় বস্তুর উদাহরণ:

  • পাথর: প্রাণহীন, কোনো বৃদ্ধি বা প্রতিক্রিয়া নেই।
  • জল: জীবের জন্য অপরিহার্য হলেও নিজে জীবিত নয়।
  • বই: তথ্য ধারণ করে কিন্তু কোনো জীবনচক্র নেই।
  • চেয়ার: বসার জন্য ব্যবহৃত বস্তু, নিজস্ব শক্তি বা প্রাণ নেই।
  • বাতাস: গ্যাসীয় পদার্থ, জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় হলেও নিজে সজীব নয়।

জীব ও জড় বস্তুর সম্পর্ক


জীব ও জড় বস্তুর মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। জীবের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য জড় বস্তুর উপর নির্ভর করতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, প্রাণীরা শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য বাতাস ব্যবহার করে, খাদ্যের জন্য মাটি এবং জল প্রয়োজন হয়, এবং বাসস্থান তৈরি করতে পাথর, কাঠ ইত্যাদি জড় উপকরণ কাজে লাগে। অর্থাৎ, জীবনের মৌলিক প্রয়োজন মেটাতে জড় বস্তু অপরিহার্য ভূমিকা রাখে।

আরও পড়তে পারেন: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মধ্যে পার্থক্য

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় জীব ও জড় উভয়ের অবদান গুরুত্বপূর্ণ। উদ্ভিদ বাতাস থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে অক্সিজেন উৎপন্ন করে, যা প্রাণীদের জীবনধারণের জন্য প্রয়োজন। আবার পাহাড়, নদী, সমুদ্রের মতো জড় বস্তু পরিবেশের তাপমাত্রা, জলচক্র এবং আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। তাই জীব ও জড়ের সম্মিলিত অবদানেই পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।


নিষ্কর্ষ


জীব কাকে বলে এবং জীব ও জড়ের মধ্যে মৌলিক পার্থক্যগুলো বুঝতে পারলে আমাদের চারপাশের জগতের বৈচিত্র্য ও কার্যপ্রক্রিয়া সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়। জীব নিজের শক্তি দিয়ে জীবনচক্র পরিচালনা করে আর জড় বস্তু বাহ্যিক শক্তির ওপর নির্ভরশীল এবং প্রাণহীন। জীবের অস্তিত্ব বজায় রাখতে জড় বস্তুর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই জীব ও জড় বস্তুর পারস্পরিক সম্পর্কের গুরুত্ব অনুধাবন করা পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি আমাদের জীবন ও ভবিষ্যতের জন্যও অপরিহার্য।

Tasnia Afroz

Tasnia Afroz

Tasnia Afroz is an Associate Editor of The Sphere Chronicles. She is a passionate writer of Bengali Language with a deep interest in the intersection of technology and culture. As a key contributor to The Sphere Chronicles, she explores a wide range of topics and crafts stories that inform, inspire, and engage our audience.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button