শেয়ার বাজার কী? শেয়ার মার্কেট বুঝুন সহজ বাংলায়

শেয়ার বাজার কি? এই প্রশ্নটি অনেকের মনেই ঘোরাফেরা করে, বিশেষ করে যারা প্রথমবার স্টক বা শেয়ার মার্কেট সম্পর্কে শুনছেন। অর্থনৈতিক খবর, সোশ্যাল মিডিয়া বা পরিচিতজনদের বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনায় এই শব্দগুলো বারবার উঠে আসে। কিন্তু আসলে শেয়ার বাজার কীভাবে কাজ করে? এখানে কেনা-বেচা কীভাবে হয়? বিনিয়োগ করে কী ধরনের লাভ বা ঝুঁকি থাকে?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা না থাকলে আপনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। তাই আজ আমরা সহজ বাংলায় জানব শেয়ার বাজারের মূল ধারণা, বিনিয়োগের প্রক্রিয়া এবং নতুনদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরামর্শ।
স্টক মার্কেট বা শেয়ার বাজার কী?
শেয়ার বাজার একটি সংগঠিত প্ল্যাটফর্ম যেখানে বিভিন্ন কোম্পানি তাদের মালিকানার অংশ অর্থাৎ শেয়ার বা স্টক সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করে। বিনিয়োগকারীরা এই শেয়ার কিনে সেই কোম্পানির অংশীদার হন এবং ভবিষ্যতে লাভ বা লোকসানে অংশীদার থাকেন।
বাজারে শেয়ারের দাম নির্ধারিত হয় চাহিদা ও যোগানের ভিত্তিতে। যখন একটি কোম্পানি ভালো পারফর্ম করে তখন তার শেয়ারের দাম বাড়ে; দুর্বল পারফর্ম করলে দাম কমে যায়। বিনিয়োগকারীরা এই ওঠানামার মধ্যেই লাভের সুযোগ খোঁজেন।
কে শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রণ করে?
বাংলাদেশে শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রণ করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (BSEC) যা ১৯৯৩ সালের ৮ জুন প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি সরকার-নিয়ন্ত্রিত একটি সংস্থা যার প্রধান দায়িত্ব হলো বাজারের স্বচ্ছতা, শৃঙ্খলা ও বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
BSEC বিভিন্ন নিয়মনীতি তৈরি করে যেগুলো অনুসরণ করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (DSE) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (CSE) তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা করে। এছাড়াও ব্রোকার হাউস, মার্চেন্ট ব্যাংক এবং লিস্টেড কোম্পানিগুলোর কার্যক্রমও কমিশনের অধীনে পড়ে, যাতে কেউ প্রতারণার সুযোগ না পায়।
প্রাথমিক বাজার বনাম সেকেন্ডারি বাজার
- প্রাথমিক বাজার (Primary Market): প্রাথমিক বাজার হলো সেই স্থান যেখানে একটি কোম্পানি প্রথমবারের মতো সাধারণ জনগণের কাছে শেয়ার বিক্রি করে। এ প্রক্রিয়াকে বলা হয় IPO (Initial Public Offering)। এখানে বিনিয়োগকারীরা সরাসরি কোম্পানি থেকে শেয়ার কেনেন এবং এই বিনিয়োগের অর্থ কোম্পানির ব্যবসা সম্প্রসারণ বা ঋণ পরিশোধে ব্যবহৃত হয়।
- সেকেন্ডারি বাজার (Secondary Market): প্রাথমিক বাজারে শেয়ার ইস্যু হওয়ার পর বিনিয়োগকারীরা সেগুলো একে অপরের মধ্যে ক্রয় বিক্রয় করতে পারেন। এই লেনদেনকে বলা হয় স্টক এক্সচেঞ্জ। এখানে কোম্পানি কোনো টাকা পায় না, শুধু বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শেয়ার হাতবদল হয়। এই বাজারে শেয়ারের দাম নির্ধারিত হয় বাজারের চাহিদা ও সরবরাহ অনুযায়ী।
শেয়ার কেনা-বেচার পদ্ধতি
শেয়ার বাজারে সফলভাবে বিনিয়োগ করতে হলে জানতে হবে কীভাবে শেয়ার কেনা ও বিক্রি করতে হয়। এই প্রক্রিয়াটি শুধু ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে না, বরং নির্দিষ্ট কিছু ধাপ অনুসরণ করতে হয় এবং সঠিক মাধ্যম ব্যবহার করতে হয়। নিচে আমরা শেয়ার কেনা-বেচার প্রতিটি ধাপ বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেছি যাতে আপনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বাজারে প্রবেশ করতে পারেন।
ব্রোকার কী এবং তার ভূমিকা
ব্রোকার হলো এমন একটি প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি যারা বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে শেয়ার কেনা-বেচার কাজ করে থাকে। বাংলাদেশে অনুমোদিত ব্রোকার হাউসগুলো ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (DSE) বা চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (CSE) এর সদস্য। আপনি যদি নিজে স্টক এক্সচেঞ্জে সরাসরি লেনদেন করতে না পারেন তবে ব্রোকারের মাধ্যমেই আপনাকে শেয়ার কিনতে বা বিক্রি করতে হবে।
একজন ব্রোকার আপনার পক্ষ থেকে অর্ডার এক্সিকিউট করে, ট্রেড কনফারমেশন দেয় এবং প্রয়োজনীয় লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহ করে। ব্রোকাররা এই সেবার বিনিময়ে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন গ্রহণ করে।
বর্তমানে অনেক ব্রোকার হাউস অনলাইন ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মও সরবরাহ করে, ফলে আপনি ঘরে বসেই সহজে শেয়ার কেনাবেচা করতে পারেন। তাই সঠিক ব্রোকার নির্বাচন বিনিয়োগের গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ।
শেয়ার কেনার ধাপসমূহ
শেয়ার কেনার জন্য আপনাকে প্রথমে একটি ব্রোকার হাউসের মাধ্যমে BO (Beneficiary Owner) অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। এটি আপনার নামে খোলা একটি ডিজিটাল অ্যাকাউন্ট যেখানে শেয়ারগুলো সংরক্ষিত থাকবে। অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র, ছবি এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ডিটেইলস প্রয়োজন হয়।
এরপর আপনি ব্রোকারের অনলাইন বা অফলাইন ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মে লগইন করে শেয়ার কেনার অর্ডার দিতে পারেন। অর্ডার দেওয়ার সময় শেয়ারের নাম, ইউনিট সংখ্যা এবং মূল্য উল্লেখ করতে হয়। একবার অর্ডার এক্সিকিউট হলে সেই শেয়ার আপনার BO অ্যাকাউন্টে যোগ হয়।
কেনার আগে কোম্পানির আর্থিক অবস্থা, বাজার মূল্য এবং সাম্প্রতিক খবর বিশ্লেষণ করা গুরুত্বপূর্ণ যাতে আপনি সচেতনভাবে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
যেভাবে শেয়ার বিক্রি করবেন
শেয়ার বিক্রি করতেও প্রক্রিয়াটি অনেকটা কেনার মতোই, তবে বিপরীত দিক থেকে। আপনি যদি আপনার BO অ্যাকাউন্টে রাখা শেয়ার বিক্রি করতে চান তাহলে ব্রোকারের ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মে গিয়ে বিক্রির অর্ডার দিতে হবে। সেখানে শেয়ারের নাম, পরিমাণ এবং আপনি কত দামে বিক্রি করতে চান তা নির্ধারণ করতে হবে।
আপনার অর্ডারটি যখন বাজারে কোন ক্রেতার চাহিদার সঙ্গে মিলে যাবে তখন সেটি এক্সিকিউট হয়। বিক্রির অর্থ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আপনার ব্রোকার অ্যাকাউন্টে জমা হয় যা আপনি ব্যাংকে স্থানান্তর করতে পারেন।
বিক্রির আগে বাজার বিশ্লেষণ করা জরুরি।যেমন: দাম বাড়ছে নাকি কমছে, কোম্পানির ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা কেমন, ইত্যাদি। কারণ ভুল সময়ে বিক্রি করলে আপনি লাভের পরিবর্তে ক্ষতিতে পড়তে পারেন।
শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের সুবিধা
শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ শুধু অর্থ উপার্জনের একটি মাধ্যম নয়, এটি আর্থিক ভবিষ্যৎ গঠনের একটি শক্তিশালী উপায়। নিচে উল্লেখ করা হলো এর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা:
- মূলধন বৃদ্ধির সম্ভাবনা: সঠিক কোম্পানিতে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ করলে শেয়ারের মূল্য বৃদ্ধি পেতে পারে যা আপনার প্রাথমিক মূলধনকে অনেক গুণ বাড়িয়ে দিতে পারে।
- ডিভিডেন্ড আয়ের সুযোগ: অনেক কোম্পানি নিয়মিতভাবে ডিভিডেন্ড প্রদান করে, ফলে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য একটি অতিরিক্ত আয়ের উৎস হয়ে ওঠে।
- লিকুইড ইনভেস্টমেন্ট: স্টক মার্কেট একটি লিকুইড বাজার, আপনি সহজেই শেয়ার কিনতে ও বিক্রি করতে পারেন যখনই প্রয়োজন হয়।
- মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে সুরক্ষা: দীর্ঘমেয়াদে শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ আপনাকে মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে, কারণ শেয়ারের দাম সাধারণত সময়ের সাথে বাড়ে।
- সম্পদের বৈচিত্র্য আনয়ন: বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে আপনি আপনার সম্পদে বৈচিত্র্য আনতে পারেন যা ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।
- অংশীদারিত্বের অনুভব: একটি কোম্পানির শেয়ার কিনলে আপনি তার আংশিক মালিক হন, অর্থাৎ আপনাকে ব্যবসার অগ্রগতির সাথে যুক্ত থাকার সুযোগ দেয়।
- স্বল্প মূল্যে বিনিয়োগের সুযোগ: শুরুতে অল্প টাকায়ও আপনি শেয়ার কিনে বিনিয়োগ শুরু করতে পারেন, নতুনদের জন্য এটি একটি বড় সুবিধা।
শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের ঝুঁকি
যদিও শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের অনেক সুবিধা রয়েছে, তবে এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকিও বিদ্যমান। এগুলো জেনে সচেতন থাকা জরুরি। নিচে প্রধান ঝুঁকিগুলো তুলে ধরা হলো:
- মূল্য পতনের ঝুঁকি: শেয়ারের দাম বাজারে ওঠানামা করে। যদি দাম হঠাৎ কমে যায় তাহলে আপনি মূলধনের একটা অংশ বা সম্পূর্ণটাই হারাতে পারেন।
- বাজার অস্থিরতা: অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, বিশ্ববাজারে প্রভাব বা কোম্পানির অভ্যন্তরীণ সংকট শেয়ার দামে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
- ভুল তথ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত: ভুল পরামর্শ, গুজব বা যাচাই না করা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বিনিয়োগ করলে বড় ধরনের ক্ষতির মুখোমুখি হতে পারেন।
- কোম্পানির আর্থিক দুর্বলতা: কিছু কোম্পানি সময়ের সাথে লোকসান করে বা বন্ধ হয়ে যেতে পারে, ফলে তাদের শেয়ারের মূল্য একেবারে কমে যেতে পারে।
- তাৎক্ষণিক লাভের আশা: অনেক বিনিয়োগকারী দ্রুত লাভের আশায় বিনিয়োগ করেন যা প্রায়ই ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্তে রূপ নেয় এবং ক্ষতির কারণ হয়।
- তারল্য সংকট: কিছু শেয়ার বাজারে সহজে বিক্রি করা যায় না, বিশেষ করে কম চাহিদার শেয়ার, যার ফলে অর্থ আটকে যেতে পারে।
বাংলাদেশে শেয়ার বাজারের ইতিহাস ও বর্তমান অবস্থা
বাংলাদেশের শেয়ার মার্কেটের ইতিহাস দীর্ঘ ও বৈচিত্র্যময়। ১৯৫৪ সালে পূর্ব পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জ অ্যাসোসিয়েশন লিমিটেড প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এর যাত্রা শুরু হয়। ১৯৫৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে লেনদেন শুরু হয়, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পর পাঁচ বছর লেনদেন বন্ধ থাকার পর ১৯৭৬ সালে পুনরায় শুরু হয়।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (DSE)
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (DSE) বাংলাদেশের প্রধান শেয়ার বাজার। ১৯৫৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে লেনদেন শুরু হয় এবং ১৯৮৬ সালে এটি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে DSE-তে ২২টি শিল্প খাতের অধীনে ৬২৫টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে। অটোমেটেড ট্রেডিং সিস্টেম চালু হওয়ার পর থেকে লেনদেন প্রক্রিয়া আরও দ্রুত ও স্বচ্ছ হয়েছে।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (CSE)
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (CSE) ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি দেশের দ্বিতীয় স্টক এক্সচেঞ্জ হিসেবে কাজ করে এবং ২০০৪ সালে ইন্টারনেটভিত্তিক ট্রেডিং সিস্টেম চালু করে। বর্তমানে CSE-তে ১৯৮টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে দরপতন ও লেনদেনের নিম্নমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে যা বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য টিপস
শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ শুরু করার জন্য প্রথম ধাপ হলো সঠিক তথ্য সংগ্রহ এবং বাজার সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা অর্জন করা। একটি বিশ্বাসযোগ্য ব্রোকার হাউস থেকে BO (Beneficiary Owner) অ্যাকাউন্ট খুলুন। এরপর ছোট পরিমাণে বিনিয়োগ দিয়ে ধীরে ধীরে অভিজ্ঞতা অর্জন করুন। বাজারের ওঠাপড়া বোঝার জন্য নিয়মিত আর্থিক খবর পড়ুন ও বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের তথ্য বিশ্লেষণ করুন।
কোন ভুলগুলো এড়িয়ে চলা উচিত?
বিনিয়োগের সময় অল্প সময়ে দ্রুত লাভের আশা নিয়ে অতিরিক্ত ঝুঁকি নেওয়া থেকে বিরত থাকুন। গুজব বা বন্ধুবান্ধবের কথা শুনে অযথা বড় অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করবেন না। আবেগপ্রবণ হয়ে বিক্রি বা কেনাকাটা এড়িয়ে চলুন। এছাড়া লেনদেনের ফি ও কর বুঝে নেয়াও গুরুত্বপূর্ণ।
বিনিয়োগের আগে করণীয় যাচাই
বিনিয়োগ করার আগে কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন, বাজারে তার অবস্থান, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও নেতৃত্বের দক্ষতা যাচাই করুন। বাজারের সামগ্রিক অবস্থা ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিও বিবেচনা করতে হবে। নিজের ঝুঁকি সহনশীলতা ও বিনিয়োগের সময়সীমা নির্ধারণ করে তারপর সিদ্ধান্ত নিন। সঠিক গবেষণা ছাড়া বিনিয়োগ করলে ক্ষতির সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
শেয়ার বাজার সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ শব্দ ও ব্যাখ্যা
- স্টক (Stock): কোনও কোম্পানির মালিকানার ছোট ছোট অংশকে স্টক বা শেয়ার বলা হয়। স্টক কেনার মাধ্যমে আপনি ঐ কোম্পানির একজন অংশীদার হন।
- ডিভিডেন্ড (Dividend): কোম্পানি তার মুনাফার একটি অংশ শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে বিতরণ করলে তাকে ডিভিডেন্ড বলা হয়। এটি শেয়ারহোল্ডারদের নিয়মিত আয়ের উৎস।
- আইপিও (IPO – Initial Public Offering): কোনও কোম্পানি প্রথমবারের মতো সাধারণ মানুষের কাছে তার শেয়ার বিক্রি করলে তাকে আইপিও বলা হয়। এটি কোম্পানির জন্য মূলধন সংগ্রহের প্রধান উপায়।
- ইন্ডেক্স (Index): একটি বাজার বা খাতের সামগ্রিক পারফরম্যান্স মাপার জন্য নির্বাচিত শেয়ারগুলোর মূল্য সমষ্টিকে ইন্ডেক্স বলা হয়, যেমন DSEX।
- ক্যাপিটাল গেইন (Capital Gain): শেয়ারের ক্রয়মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করলে যে লাভ হয় তাকে ক্যাপিটাল গেইন বলা হয়। এটি বিনিয়োগ থেকে অর্জিত মূলধনি লাভ।
ডিজিটাল যুগে শেয়ার বাজার: অনলাইন ট্রেডিং ও অ্যাপস
বর্তমান সময়ে স্মার্টফোন ও ইন্টারনেটের বিস্তার শেয়ার বাজারকে আরও সহজ এবং দ্রুতগতির করে তুলেছে। মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে বিনিয়োগকারীরা ঘরে বসেই যে কোনো সময় শেয়ার কিনতে ও বিক্রি করতে পারেন। অনেক ব্রোকার হাউস তাদের নিজস্ব ট্রেডিং অ্যাপস তৈরি করেছে যেখানে আপনি লাইভ বাজারের মূল্য দেখতে পারেন, অর্ডার দিতে পারেন এবং লেনদেনের হিসাব রাখতে পারেন। এই প্রযুক্তির কারণে বিনিয়োগ প্রক্রিয়া অনেক দ্রুত এবং স্বচ্ছ হয়ে উঠেছে।
ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে শেয়ার মার্কেট
ইসলামি শরীয়াহর নিয়ম অনুযায়ী বিনিয়োগ করার জন্য শেয়ার বাজারে কিছু বিশেষ দিক বিবেচনা করা হয়। হালাল এবং শরীয়াহ কমপ্লায়েন্ট শেয়ার নির্বাচন করে মুসলিম বিনিয়োগকারীরা তাদের ধর্মীয় নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অর্থায়ন করতে পারেন।
ইসলামি শরীয়াহ অনুসারে, হালাল বিনিয়োগ হলো এমন বিনিয়োগ যা সুদ, জুয়া, মদ্যপান, ও অন্য কোনও নিষিদ্ধ কার্যকলাপের সাথে জড়িত নয়। বিনিয়োগকারীরা এমন ব্যবসায় অংশ নেন যেগুলো ইসলামি নীতিমালা মেনে চলে এবং নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য। বর্তমানে অনেক স্টক এক্সচেঞ্জ শরীয়াহ কমপ্লায়েন্ট ইন্ডেক্সও প্রদান করে, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য দিকনির্দেশনা দেয়।
শেয়ার বাজার নিয়ে প্রচলিত ভুল ধারণা
শেয়ার মার্কেট কি জুয়ার মতো?
অনেকে শেয়ার বাজারকে জুয়া বা দৌড়ঝাঁপের সঙ্গে মিলিয়ে দেখেন, এটি ভুল ধারণা। শেয়ার বাজারে গবেষণা, বিশ্লেষণ এবং পরিকল্পনার মাধ্যমে বিনিয়োগ করা হয় যেখানে ঝুঁকি থাকলেও তা সম্পূর্ণ সজাগ ও নিয়ন্ত্রিত। তাই শেয়ার বাজারকে শুধু ভাগ্যের ওপর নির্ভরশীল কোনো খেলা ভাবা ঠিক নয়।
শুধুই ধনীদের খেলা?
অন্য একটি ভুল ধারণা হলো শেয়ার বাজার শুধু ধনীদের জন্যই খোলা। বাস্তবে, আজকের ডিজিটাল যুগে স্বল্পপুঁজির বিনিয়োগকারীরাও সহজেই শেয়ার বাজারে অংশ নিতে পারেন। অনেক ব্রোকার হাউস ছোট পরিমাণে বিনিয়োগের সুযোগ দেয়, তাই শেয়ার মার্কেট সবাইকে অর্থায়নের সুযোগ করে দেয়।
নিষ্কর্ষ
শেয়ার বাজার একদিকে যেমন অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দরজা খুলে দেয়, অন্যদিকে সতর্কতা এবং সঠিক জ্ঞানের ওপর নির্ভরশীল একটি জায়গাও বটে। বিনিয়োগের আগে সঠিক গবেষণা ও পরিকল্পনা অপরিহার্য, এগুলো ঝুঁকি কমিয়ে লাভের সম্ভাবনা বাড়ায়। ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্যে এখন বিনিয়োগ আরও সহজ ও সাশ্রয়ী হয়েছে। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও সচেতনতা রাখা গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং, সঠিক জ্ঞান এবং ধৈর্যের সঙ্গে বিনিয়োগ করুন, আপনার আর্থিক ভবিষ্যৎ নিরাপদ করুন।