বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিBengali

কম্পিউটার কী? কম্পিউটার কীভাবে কাজ করে, কত প্রকার ও কি কি?

আজকের বিশ্বে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই কম্পিউটারের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। শিক্ষা, ব্যবসা, যোগাযোগ কিংবা বিনোদন, সব ক্ষেত্রেই প্রযুক্তির অগ্রগতি আমাদের জীবনকে করেছে সহজ ও দ্রুততর। তবে আমরা প্রতিনিয়ত এই যন্ত্র ব্যবহার করলেও, কম্পিউটার আসলে কি, এটি কীভাবে কাজ করে কিংবা এর প্রকারভেদ, এসব বিষয়ে অনেকের মাঝেই অস্পষ্টতা রয়ে যায়।

এই আর্টিকেলে আমরা ধাপে ধাপে আলোচনা করব কম্পিউটার কী, এটি কীভাবে কাজ করে, কত প্রকার এবং এর ব্যবহার ও গুরুত্ব সম্পর্কে। পাশাপাশি কম্পিউটারের প্রধান অংশ, এর সুবিধা ও অসুবিধা এবং ভবিষ্যতের সম্ভাবনাময় প্রযুক্তি নিয়েও সংক্ষেপে আলোকপাত করা হবে।

কম্পিউটার কাকে বলে

কম্পিউটার হলো এমন একটি ইলেকট্রনিক যন্ত্র যা প্রদত্ত নির্দেশনা বা প্রোগ্রামের মাধ্যমে তথ্য (Data) সংগ্রহ, প্রক্রিয়াজাত ও ফলাফল প্রদর্শন করতে সক্ষম। সহজভাবে বলতে গেলে, এটি মানুষের নির্দেশনা অনুযায়ী দ্রুত গাণিতিক ও যৌক্তিক কাজ সম্পাদন করে এবং প্রয়োজনে তথ্য সংরক্ষণ করে রাখে।

কম্পিউটারকে তথ্য প্রক্রিয়াজাত করার মাধ্যমে মানুষের বিভিন্ন কাজকে সহজ, দ্রুত ও নির্ভুল করে তোলে। এটি মানুষকে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে এবং জটিল সমস্যার সমাধান বের করতে সক্ষম।


কম্পিউটার শব্দটির উৎস


“কম্পিউটার” শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ ‘Compute’ থেকে যার অর্থ হলো গণনা বা হিসাব করা। প্রাথমিকভাবে কম্পিউটারকে শুধু জটিল গাণিতিক কাজের জন্য ব্যবহার করা হতো। কিন্তু প্রযুক্তির উন্নতির ফলে এখন এটি শুধু গণনা নয়, বরং তথ্য প্রক্রিয়াকরণ, যোগাযোগ, বিনোদন, গবেষণা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং দৈনন্দিন কাজেও ব্যবহৃত হচ্ছে।


কম্পিউটার কীভাবে কাজ করে?


কম্পিউটার কীভাবে কাজ করে

কম্পিউটার একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাজ সম্পন্ন করে যেখানে ইনপুট থেকে শুরু করে প্রক্রিয়াজাতকরণ, আউটপুট প্রদর্শন এবং তথ্য সংরক্ষণ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কম্পিউটারের পুরো কাজকে চারটি মূল ধাপে ভাগ করা যায়:

  • Input (ইনপুট): ব্যবহারকারী কী-বোর্ড, মাউস, স্ক্যানার বা অন্যান্য ইনপুট ডিভাইসের মাধ্যমে কম্পিউটারকে নির্দেশনা ও ডেটা প্রদান করে।
  • Process (প্রসেস): ইনপুটকৃত তথ্য CPU ও সফটওয়্যারের মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাত হয়। এখানে গণনা, বিশ্লেষণ ও নির্দেশনা অনুসারে কাজ সম্পন্ন করা হয়।
  • Output (আউটপুট): প্রক্রিয়াজাত তথ্য মনিটর, প্রিন্টার বা স্পিকারের মতো আউটপুট ডিভাইসের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর সামনে উপস্থাপিত হয়।
  • Storage (স্টোরেজ): প্রাপ্ত তথ্য ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য হার্ডড্রাইভ, SSD বা ক্লাউডে সংরক্ষণ করা হয়।

উদাহরণ হিসেবে, আপনি যদি কীবোর্ডে একটি শব্দ টাইপ করেন, সেটি ইনপুট হবে। CPU সেই তথ্য প্রক্রিয়াজাত করে মনিটরে শব্দটি আউটপুট আকারে দেখাবে এবং চাইলে তা হার্ডড্রাইভে সেভ করে রাখবে।


কম্পিউটার কত প্রকার ও কি কি


আজকের বিশ্বে কম্পিউটার আমাদের জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে সব কম্পিউটার একই রকম নয়। আকার, কাজের ধরন, উদ্দেশ্য, কর্মক্ষমতা ও তথ্য প্রক্রিয়াকরণের ভিত্তিতে কম্পিউটারকে ভিন্ন ভিন্নভাবে ভাগ করা হয়। নিচে কম্পিউটারের শ্রেণীবিভাগগুলো বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।

আকার অনুযায়ী কম্পিউটারের প্রকারভেদ

কম্পিউটারের আকার ও ক্ষমতার ভিত্তিতে এগুলোকে বিভিন্ন ধরণের ভাগ করা যায়। আকার অনুযায়ী শ্রেণীবিভাগ মূলত কম্পিউটারের প্রক্রিয়াকরণ শক্তি, মেমোরি ক্ষমতা এবং ব্যবহারিক উদ্দেশ্যের ওপর নির্ভর করে।

  • সুপারকম্পিউটার (Supercomputer): সুপারকম্পিউটার হলো অত্যন্ত দ্রুতগতির এবং উচ্চ ক্ষমতার কম্পিউটার যা জটিল গণনা ও বড় ডেটা প্রক্রিয়াকরণের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি সাধারণত বৈজ্ঞানিক গবেষণা, আবহাওয়া পূর্বাভাস, মহাকাশ গবেষণা এবং নিউক্লিয়ার গবেষণায় ব্যবহৃত হয়।
  • মেইনফ্রেম (Mainframe): মেইনফ্রেম হলো বৃহৎ আকারের কম্পিউটার যা একসাথে অসংখ্য ব্যবহারকারীর ডেটা এবং অ্যাপ্লিকেশন পরিচালনা করতে সক্ষম। ব্যাংকিং, বীমা কোম্পানি, সরকারি সংস্থা এবং বড় কর্পোরেট ডেটা সেন্টারে এটি প্রধানভাবে ব্যবহৃত হয়।
  • মিনি কম্পিউটার (Minicomputer): মিনি কম্পিউটার হলো মাঝারি ক্ষমতার কম্পিউটার যা ছোট ও মাঝারি আকারের সংস্থার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এটি ল্যাবরেটরি, উৎপাদন শিল্প এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ সেন্টারে নিয়ন্ত্রণ এবং ডেটা প্রক্রিয়াকরণের জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • মাইক্রোকম্পিউটার (Microcomputer): মাইক্রোকম্পিউটার হলো সাধারণভাবে ডেস্কটপ বা ব্যক্তিগত কম্পিউটার যা এক বা একাধিক ব্যবহারকারীর জন্য তৈরি করা হয়। এটি অফিস, স্কুল, ঘরে এবং ছোট ব্যবসায় ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ পিসি, ল্যাপটপ এবং ট্যাবলেট।
  • এমবেডেড কম্পিউটার (Embedded Computer): এম্বেডেড কম্পিউটার হলো একটি নির্দিষ্ট কাজের জন্য ডিজাইন করা ছোট কম্পিউটার যা যন্ত্রের মধ্যে সংযুক্ত থাকে। এটি সাধারণত মোবাইল ফোন, স্মার্ট টিভি, রোবটিক্স এবং গাড়ির নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় ব্যবহৃত হয়।

কার্যকারিতা অনুযায়ী কম্পিউটারের শ্রেণীবিভাগ

কম্পিউটারের কার্যকারিতা বা প্রক্রিয়াকরণের ধরন অনুযায়ী এগুলোকে তিনটি প্রধান শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। এই শ্রেণীবিভাগ মূলত নির্ধারণ করে কম্পিউটার ডেটা কীভাবে গ্রহণ, প্রক্রিয়াকরণ এবং আউটপুট দেয়।

  • অ্যানালগ (Analog): অ্যানালগ কম্পিউটার ডেটা ক্রমাগত সিগন্যাল আকারে প্রক্রিয়াকরণ করে। এটি সাধারণত বৈজ্ঞানিক গবেষণা, সিমুলেশন এবং ইঞ্জিনিয়ারিং সমস্যার সমাধানে ব্যবহৃত হয়।
  • ডিজিটাল (Digital): ডিজিটাল কম্পিউটার ডেটা বাইনারি ফর্মে প্রক্রিয়াকরণ করে। এটি অফিস, স্কুল, ব্যাংকিং, এবং ঘরোয়া ব্যবহারে সবচেয়ে প্রচলিত।
  • হাইব্রিড (Hybrid): হাইব্রিড কম্পিউটার অ্যানালগ ও ডিজিটাল উভয় প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতা যুক্ত করে। এটি জটিল বৈজ্ঞানিক এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজে ব্যবহৃত হয় যেখানে উভয় ধরনের সুবিধা প্রয়োজন।

উদ্দেশ্য অনুযায়ী কম্পিউটারের প্রকারভেদ

কম্পিউটারের উদ্দেশ্য অনুযায়ী শ্রেণীবিভাগ মূলত নির্ধারণ করে কম্পিউটার কোন ধরনের কাজের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এটি ব্যবহারকারীর চাহিদা ও প্রয়োগ ক্ষেত্র অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন হয়।

  • সাধারণ উদ্দেশ্য (General-purpose): সাধারণ উদ্দেশ্যের কম্পিউটার বিভিন্ন ধরনের কাজ সম্পাদন করতে সক্ষম। এটি অফিস, শিক্ষা, ঘরোয়া এবং ছোট ব্যবসায়িক কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • বিশেষ উদ্দেশ্য (Special-purpose): বিশেষ উদ্দেশ্যের কম্পিউটার একটি নির্দিষ্ট কাজের জন্য তৈরি করা হয়। এটি যেমন ব্যাংকিং ট্রানজেকশন, রকেট নিয়ন্ত্রণ বা মেডিকেল ইমেজিং-এর জন্য ব্যবহার করা হয়।

কর্মক্ষমতা অনুযায়ী কম্পিউটারের শ্রেণীবিভাগ

কম্পিউটারের কর্মক্ষমতা অনুযায়ী শ্রেণীবিভাগ মূলত নির্ধারণ করে যে কম্পিউটার কত দ্রুত এবং কত কার্যক্ষমভাবে ডেটা প্রক্রিয়াকরণ করতে সক্ষম। এই শ্রেণীবিভাগ ব্যবহারকারীর প্রয়োজন এবং কাজের জটিলতার ওপর ভিত্তি করে ভিন্ন হয়ে থাকে।

  • ওয়ার্কস্টেশন (Workstation): ওয়ার্কস্টেশন হলো উচ্চ ক্ষমতার কম্পিউটার যা একক ব্যবহারকারীর জন্য বিশেষায়িত কাজ সম্পাদন করতে সক্ষম। এটি গ্রাফিক্স ডিজাইন, ইঞ্জিনিয়ারিং সিমুলেশন এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ব্যবহৃত হয়।
  • সার্ভার (Server): সার্ভার হলো এমন একটি কম্পিউটার যা নেটওয়ার্কের মাধ্যমে একাধিক ব্যবহারকারীর জন্য ডেটা এবং অ্যাপ্লিকেশন সরবরাহ করে। এটি বড় সংস্থা, ডেটা সেন্টার এবং অনলাইন পরিষেবা পরিচালনায় ব্যবহৃত হয়।

তথ্য প্রক্রিয়াকরণ অনুযায়ী কম্পিউটারের প্রকারভেদ

কম্পিউটারের তথ্য প্রক্রিয়াকরণের ধরন অনুযায়ী এগুলোকে বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। এই শ্রেণীবিভাগ মূলত নির্ধারণ করে যে কম্পিউটার কীভাবে ডেটা গ্রহণ, প্রক্রিয়াকরণ এবং আউটপুট দেয়।

  • ব্যাচ প্রসেসিং সিস্টেম (Batch Processing System): ব্যাচ প্রসেসিং সিস্টেম একসাথে ডেটার একটি বড় ব্যাচ প্রক্রিয়াকরণ করে এবং ফলাফল পরে সরবরাহ করে। এটি ব্যাংকিং, বীমা এবং বেতন হিসাবের মতো নিয়মিত বড় পরিমাণ ডেটা পরিচালনায় ব্যবহৃত হয়।
  • রিয়েল-টাইম সিস্টেম (Real-time System): রিয়েল-টাইম সিস্টেম অবিলম্বে ইনপুট গ্রহণ করে এবং তা প্রক্রিয়াকরণ করে তাৎক্ষণিক ফলাফল প্রদান করে। এটি হাসপাতাল, বিমাননিয়ন্ত্রণ এবং মিলিটারি সিস্টেমের মতো জরুরি কাজে ব্যবহৃত হয়।
  • অনলাইন প্রসেসিং সিস্টেম (Online Processing System): অনলাইন প্রসেসিং সিস্টেম ব্যবহারকারীর সাথে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করে ডেটা প্রক্রিয়াকরণ করে। এটি ই-কমার্স, ব্যাংকিং এবং অন্যান্য ইন্টারনেট ভিত্তিক পরিষেবায় ব্যবহার করা হয়।

কম্পিউটারের প্রধান অংশসমূহ


কম্পিউটার কার্যকরভাবে কাজ করতে বিভিন্ন মূল অংশের সমন্বয়ে গঠিত। প্রতিটি অংশ নির্দিষ্ট ভূমিকা পালন করে, ডেটা গ্রহণ, প্রক্রিয়াকরণ, সংরক্ষণ এবং ফলাফল প্রদর্শনে, যা কম্পিউটারকে একটি পূর্ণাঙ্গ সিস্টেম হিসেবে কার্যকর করে।

ইনপুট ডিভাইস (Input Devices)

ইনপুট ডিভাইস হলো সেই সরঞ্জাম যা ব্যবহারকারীর নির্দেশনা বা ডেটা কম্পিউটারে পাঠায়। উদাহরণস্বরূপ কী-বোর্ড, মাউস, স্ক্যানার এবং মাইক্রোফোন। এগুলো ছাড়া কম্পিউটার কোনো তথ্য গ্রহণ করতে পারে না।

আউটপুট ডিভাইস (Output Devices)

আউটপুট ডিভাইস কম্পিউটারের প্রক্রিয়াকৃত তথ্য ব্যবহারকারীর কাছে প্রদর্শন করে। যেমন মনিটর, প্রিন্টার এবং স্পিকার। এগুলো ব্যবহারকারীর জন্য তথ্যকে বোঝার উপযোগী আকারে রূপান্তরিত করে।

প্রসেসিং ইউনিট (CPU: ALU, Control Unit, Memory)

প্রসেসিং ইউনিট বা সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট (CPU) হলো কম্পিউটারের মস্তিষ্ক। এটি নির্দেশনা অনুসারে ডেটা প্রক্রিয়াকরণ করে, যেখানে ALU গণনা এবং লজিকাল অপারেশন, কন্ট্রোল ইউনিট নির্দেশ পরিচালনা, এবং মেমোরি অস্থায়ী তথ্য সংরক্ষণে ব্যবহার হয়।

স্টোরেজ (Storage)

স্টোরেজ হলো কম্পিউটারের দীর্ঘমেয়াদি তথ্য সংরক্ষণের স্থান। হার্ড ডিস্ক, SSD, এবং অপটিক্যাল ডিভাইসের মাধ্যমে এটি ডেটা স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করে। স্টোরেজ ব্যবহারকারীর তথ্য এবং সফটওয়্যার নিরাপদ রাখে।


কম্পিউটারের ব্যবহার ও গুরুত্ব


কম্পিউটার আধুনিক জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে। শিক্ষা, ব্যবসা, চিকিৎসা, যোগাযোগ এবং বিনোদন, প্রতিটি ক্ষেত্রে কম্পিউটার কার্যকারিতা বৃদ্ধি এবং কাজের গতি ও নির্ভুলতা নিশ্চিত করছে।

শিক্ষা (Education)

শিক্ষা ক্ষেত্রে কম্পিউটার শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জন্য শিক্ষণীয় উপকরণ এবং অনলাইন লার্নিং সুবিধা প্রদান করে। এটি গবেষণা, প্রেজেন্টেশন, ই-লার্নিং এবং ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে ব্যবহৃত হয়।

ব্যবসা (Business)

ব্যবসায় কম্পিউটার ডেটা বিশ্লেষণ, হিসাব-নিকাশ, কাস্টমার ম্যানেজমেন্ট এবং অনলাইন ট্রানজেকশন সহজ করে। এটি সংস্থাগুলোর কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হয়।

চিকিৎসা (Healthcare)

চিকিৎসা ক্ষেত্রে কম্পিউটার রোগ নির্ণয়, রোগীর রেকর্ড সংরক্ষণ এবং চিকিৎসা সরঞ্জামের নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হয়। এটি ডাক্তার এবং হাসপাতালকে নির্ভুল এবং দ্রুত সেবা প্রদানে সহায়তা করে।

যোগাযোগ (Communication)

কম্পিউটার ইমেইল, ভিডিও কনফারেন্স, সোশ্যাল মিডিয়া এবং চ্যাট প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে দ্রুত ও কার্যকর যোগাযোগ নিশ্চিত করে। এটি ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক যোগাযোগের ক্ষেত্রে অপরিহার্য ভূমিকা রাখে।

বিনোদন (Entertainment)

বিনোদনে কম্পিউটার ভিডিও গেম, সিনেমা, মিউজিক স্ট্রিমিং এবং গ্রাফিক ডিজাইনের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি ব্যবহারকারীর ক্রিয়েটিভিটি ও বিনোদনের অভিজ্ঞতা উন্নত করে।


কম্পিউটারের সুবিধা ও অসুবিধা


কম্পিউটার আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে সহজ ও কার্যকর করেছে, তবে সঙ্গে কিছু চ্যালেঞ্জও নিয়ে আসে। সুবিধা এবং অসুবিধা উভয়ই বুঝে ব্যবহার করলে কম্পিউটার থেকে সর্বোচ্চ লাভ গ্রহণ করা সম্ভব।

সুবিধা

  • কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব।
  • বড় পরিমাণ তথ্য সংরক্ষণ করা যায়।
  • একাধিক কাজে ব্যবহারযোগ্য।
  • তথ্য প্রক্রিয়াকরণে নির্ভুলতা থাকে।
  • সময় এবং শ্রম সাশ্রয় হয়।
  • ডিজাইন ও গ্রাফিক্স তৈরি সহজ হয়।
  • অনলাইন যোগাযোগ এবং শেয়ারিং সম্ভব।
  • গবেষণা ও বিশ্লেষণ দ্রুত হয়।
  • শিক্ষায় ই-লার্নিং সহজ হয়।
  • ব্যবসায় হিসাব-নিকাশ দ্রুত হয়।
  • রিয়েল-টাইম সেবা প্রদান করা যায়।
  • বিনোদন এবং ক্রিয়েটিভ কাজের সুযোগ বৃদ্ধি পায়।

অসুবিধা

  • অতিরিক্ত ব্যবহার আসক্তি তৈরি করতে পারে।
  • চোখ এবং মস্তিষ্কে চাপ সৃষ্টি হয়।
  • শারীরিক স্বাস্থ্য ঝুঁকি যেমন কোমরব্যথা ও স্থূলতা বাড়ায়।
  • সঠিক সময় ব্যবস্থাপনা না হলে সময় নষ্ট হয়।
  • সাইবার নিরাপত্তা ও তথ্য চুরি ঝুঁকি থাকে।
  • অনলাইন গোপনীয়তা সংক্রান্ত সমস্যা হতে পারে।
  • সামাজিক যোগাযোগে অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা তৈরি হয়।

ভবিষ্যতের কম্পিউটার প্রযুক্তি


ভবিষ্যতের কম্পিউটার প্রযুক্তি আমাদের জীবনে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। আরও দ্রুত, স্মার্ট এবং ছোট আকারের কম্পিউটার আমাদের কাজের ধরন এবং তথ্য প্রক্রিয়াকরণের পদ্ধতি বদলে দেবে।

  • কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI): AI কম্পিউটারকে মানুষের মত চিন্তা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা প্রদান করে। এটি স্বয়ংক্রিয় সেবা, ডেটা বিশ্লেষণ এবং রোবোটিক্সে ব্যবহৃত হচ্ছে।
  • কোয়ান্টাম কম্পিউটার (Quantum Computer): কোয়ান্টাম কম্পিউটার প্রচলিত কম্পিউটারের চেয়ে অনেক দ্রুত এবং জটিল সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম। এটি বিজ্ঞান, এনক্রিপশন এবং বৃহৎ ডেটা বিশ্লেষণে বিপ্লব ঘটাচ্ছে।
  • আরও দ্রুত ও ছোট আকারের ডিভাইস (Faster and Smaller Devices): ভবিষ্যতে কম্পিউটার আরও কম শক্তি খরচ করে দ্রুত কাজ সম্পন্ন করবে এবং পকেটের মধ্যে বহনযোগ্য হবে। এটি শিক্ষার, ব্যবসার এবং ব্যক্তিগত ব্যবহারে সহজতা বৃদ্ধি করবে।

নিষ্কর্ষ


আজকের আধুনিক জীবন কম্পিউটার ছাড়া কল্পনা করা প্রায় অসম্ভব। এটি আমাদের কাজকে দ্রুত, সহজ এবং নির্ভুল করেছে, শিক্ষা, ব্যবসা, চিকিৎসা, যোগাযোগ ও বিনোদনের ক্ষেত্রে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করছে। প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে ভবিষ্যতের কম্পিউটার আরও স্মার্ট, দ্রুত এবং বহুমুখী হবে যা মানব জীবনের গতি ও সুবিধাকে নতুন দিগন্তে নিয়ে যাবে। সুতরাং কম্পিউটার কেবল একটি যন্ত্র নয়, বরং আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

Tasnia Afroz

Tasnia Afroz

Tasnia Afroz is an Associate Editor of The Sphere Chronicles. She is a passionate writer of Bengali Language with a deep interest in the intersection of technology and culture. As a key contributor to The Sphere Chronicles, she explores a wide range of topics and crafts stories that inform, inspire, and engage our audience.

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button