বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয়? নিসাব ও যাকাতের পূর্ণ হিসাব
যাকাত ইসলামের পাঁচটি মৌলিক স্তম্ভের একটি। এটি শুধু দান নয়, বরং নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ হলে এটি ফরজ ইবাদত। কিন্তু অনেক মুসলমানের মধ্যেই একটি সাধারণ প্রশ্ন থাকে —
“বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয়?”
এই আর্টিকেলে আমরা খুব সহজভাবে ব্যাখ্যা করব:
- যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত
- যাকাতের নিসাব কী এবং কীভাবে হিসাব করবেন
- টাকা, স্বর্ণ, রুপার ক্ষেত্রে যাকাত
- বাস্তব উদাহরণসহ সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা
যাকাত ফরজ হওয়ার মূল শর্তগুলো
যাকাত ফরজ হওয়ার আগে কিছু মৌলিক শর্ত পূরণ করা আবশ্যক। এই শর্তগুলো নিশ্চিত করে যে যাকাত দেওয়ার দায়িত্ব শুধুমাত্র সেই ব্যক্তির ওপর হবে যার কাছে যথেষ্ট সম্পদ আছে এবং যিনি ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী সক্ষম। কারও ওপর যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য সাধারণভাবে নিচের শর্তগুলো পূরণ হতে হয়:
- মুসলমান হওয়া
- স্বাধীন হওয়া
- নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া
- সম্পদের ওপর এক পূর্ণ চন্দ্র বছর (হিজরি বছর) অতিক্রান্ত হওয়া
- সম্পদ মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত হওয়া
যাকাতের নিসাব কী?
নিসাব হলো সেই নির্দিষ্ট সম্পদের পরিমাণ যার ওপরে যাকাত ফরজ হয়ে যায়। এটি মূলত মুসলমানদের মধ্যে সামাজিক ন্যায় ও দরিদ্রদের সহায়তা নিশ্চিত করার একটি মানদণ্ড।
ইসলামে নিসাব নির্ধারণ করা হয়েছে:
- স্বর্ণ অথবা
- রুপা, এই দুইটির যেকোনো একটির ভিত্তিতে
নিসাবের পরিমাণ:
- স্বর্ণ: ৭.৫ তোলা (৮৭.৪৮ গ্রাম)
- রুপা: ৫২.৫ তোলা (৬১০.৬২ গ্রাম)
বর্তমানে অধিকাংশ আলেম রুপার নিসাব অনুযায়ী যাকাত হিসাব করাকে বেশি উপযোগী মনে করেন, কারণ এতে গরিবদের উপকার বেশি হয়।
বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয়?
এটি নির্ভর করে স্বর্ণ বা রুপার বর্তমান বাজার মূল্যের ওপর।
সহজভাবে বোঝার জন্য:
ধরা যাক —
- বর্তমানে রুপার দাম: প্রতি গ্রাম ২৬০ টাকা (ডিসেম্বর, ২০২৫ রেট অনুযায়ী, আপডেটেড রেট চেক করুন)
তাহলে নিসাব হবে:
৬১০.৬২ × ২৬০ = ১৫৮,৭৬১ টাকা (প্রায়)
অর্থাৎ, আপনার কাছে যদি ১৫৮,৭৬১ টাকা বা তার বেশি নগদ টাকা, ব্যাংক ব্যালেন্স, সঞ্চয় বা সমমূল্যের সম্পদ থাকে এবং তা এক বছর পূর্ণ হয়, তাহলে আপনার ওপর যাকাত ফরজ হবে।
মনে রাখবেন: প্রকৃত হিসাবের জন্য বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী নিসাব হিসাব করতে হবে।
কোন কোন টাকার ওপর যাকাত দিতে হয়?
যাকাত হিসাবের সময় নিচের সব সম্পদ একসাথে যোগ করতে হয়:
- নগদ টাকা
- ব্যাংক অ্যাকাউন্টে থাকা টাকা
- সঞ্চয়পত্র বা এফডিআর
- ব্যবসায়িক পণ্য
- স্বর্ণ ও রুপা (ব্যবহৃত হলেও অধিকাংশ মত অনুযায়ী)
- পাওনা টাকা (আদায়যোগ্য হলে)
❌ কিন্তু যেগুলোর ওপর যাকাত নেই:
- নিজে থাকার ঘর
- ব্যবহৃত কাপড়, আসবাব
- ব্যক্তিগত গাড়ি
- দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিস
যাকাতের হার কত?
যাকাতের হার হলো:
- ২.৫% (৪০ ভাগের ১ ভাগ)
উদাহরণ:
যদি আপনার মোট যাকাতযোগ্য সম্পদ হয়:
- ১,০০,০০০ টাকা
তাহলে যাকাত দিতে হবে:
১,০০,০০০ × ২.৫% = ২,৫০০ টাকা
একটি বাস্তব উদাহরণ (সহজ হিসাব)
ধরা যাক, একজন ব্যক্তির আছে:
- নগদ টাকা: ৫০,০০০ টাকা
- ব্যাংকে সঞ্চয়: ১০০,০০০ টাকা
- স্বর্ণের সমমূল্য: ১২০,০০০ টাকা
মোট সম্পদ = ২,৭০,০০০ টাকা
যদি এই সম্পদ এক বছর ধরে তার কাছে থাকে (যেটি নিসাব অর্থাৎ বর্তমান বাজার মূল্য হিসাবে ১৫৮,৭৬১ টাকা অতিক্রম করেছে) তাহলে:
ঐ ব্যক্তির যাকাতের পরিমান হবে = ২,৭০,০০০ × ২.৫% = ৬,৭৫০ টাকা
গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন (FAQ)
শুধু টাকা থাকলে কি যাকাত ফরজ হয়?
হ্যাঁ। শুধু নগদ টাকা থাকলেও, যদি তা নিসাব পরিমাণ হয় এবং এক বছর পূর্ণ হয় তাহলে যাকাত ফরজ।
ব্যাংকে রাখা টাকার ওপর কি যাকাত দিতে হয়?
হ্যাঁ। ব্যাংকে থাকা সব সঞ্চয়ের ওপর যাকাত দিতে হয়, যদি তা নিসাব পরিমাণ হয় এবং এক বছর পূর্ণ হয়।
ঋণ থাকলে কী হবে?
যদি আপনার ওপর তাৎক্ষণিক পরিশোধযোগ্য ঋণ থাকে, তাহলে তা মোট সম্পদ থেকে বাদ দিয়ে যাকাত হিসাব করা যায়।
নিষ্কর্ষ
সংক্ষেপে বলা যায় —
- যাকাত ফরজ হয় নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে
- বর্তমানে টাকার নিসাব নির্ভর করে স্বর্ণ বা রুপার বাজারদরের ওপর
- সাধারণত রুপার নিসাব অনুযায়ী হিসাব করলে যাকাত ফরজ হওয়ার সীমা তুলনামূলক কম হয়
- নিসাব অতিক্রম করলে এবং এক বছর পূর্ণ হলে ২.৫% যাকাত আদায় করা ফরজ
যাকাত শুধু সম্পদ পবিত্র করে না, সমাজের দরিদ্র মানুষের অধিকারও নিশ্চিত করে। তাই সঠিকভাবে হিসাব করে সময়মতো যাকাত আদায় করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।
