বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিBengali

কম্পিউটারের ইতিহাস: প্রথম কম্পিউটার আবিষ্কার, বিকাশ ও আধুনিক প্রযুক্তির অগ্রগতি

মানব সভ্যতার বিকাশে কম্পিউটার একটি বৈপ্লবিক আবিষ্কার। আজকের দিনে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গবেষণা, ব্যবসা, এমনকি দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কম্পিউটার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। 

তবে এই প্রযুক্তির পেছনের দীর্ঘ ইতিহাস অনেকেই জানেন না। প্রাচীন গণনার যন্ত্র থেকে শুরু করে আধুনিক সুপারকম্পিউটার পর্যন্ত কম্পিউটার কীভাবে বিকশিত হয়েছে তা জানা শুধু আকর্ষণীয়ই নয়, প্রযুক্তির ভবিষ্যত বোঝার ক্ষেত্রেও অপরিহার্য।

এই আর্টিকেলে আমরা কম্পিউটারের ইতিহাস নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। পাঠক জানতে পারবেন কম্পিউটার শব্দের উৎপত্তি, এর ধাপে ধাপে বিকাশ, আবিষ্কারের পেছনের বৈজ্ঞানিক অবদান, প্রথম কম্পিউটার আবিষ্কারক নিয়ে বিতর্ক এবং আধুনিক যুগে কম্পিউটারের ব্যবহার ও প্রভাব সম্পর্কে।

সংক্ষেপে মূল কথা

  • কম্পিউটারের ইতিহাস প্রাচীন গণনাযন্ত্র আবাকাস থেকে শুরু করে আধুনিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও কোয়ান্টাম প্রযুক্তি পর্যন্ত দীর্ঘ বিকাশের ফল।
  • চার্লস ব্যাবেজ “ডিফারেন্স ইঞ্জিন” ও “এনালিটিক্যাল ইঞ্জিন”-এর নকশার মাধ্যমে আধুনিক কম্পিউটারের ভিত্তি স্থাপন করেন।
  • দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে Colossus ও ENIAC তৈরি হয় যা প্রোগ্রামেবল ইলেকট্রনিক কম্পিউটারের যুগের সূচনা করে।
  • কম্পিউটার এখন পাঁচ প্রজন্ম অতিক্রম করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ক্লাউড কম্পিউটিং ও সুপারকম্পিউটারের যুগে প্রবেশ করেছে।

কম্পিউটারের ইতিহাস


কম্পিউটার শব্দের উৎপত্তি ও প্রাচীন গণনাযন্ত্রের ব্যবহার আমাদের দেখায় যে মানুষের মধ্যে হিসাব ও তথ্য প্রক্রিয়াকরণের প্রয়োজন ছিল বহু আগেই। এই ধারাবাহিক প্রয়োজনই পরবর্তীতে আরও উন্নত যন্ত্র আবিষ্কারের অনুপ্রেরণা জোগায়। 

কম্পিউটার শব্দের উৎপত্তি

“কম্পিউটার” শব্দটি এসেছে ইংরেজি শব্দ “Compute” থেকে যার অর্থ হলো গণনা করা বা হিসাব করা। প্রাথমিকভাবে “কম্পিউটার” বলতে বোঝানো হতো এমন একজন মানুষকে যিনি গণিতের জটিল হিসাব কষে ফলাফল বের করতেন। 

পরে যন্ত্র ব্যবহার করে এই গণনার কাজ দ্রুত ও নির্ভুলভাবে সম্পন্ন হওয়ায় যন্ত্রকেও “কম্পিউটার” বলা শুরু হয়। ধীরে ধীরে এটি শুধু হিসাব নয়, তথ্য প্রক্রিয়াকরণ ও সমস্যা সমাধানের একটি বহুমুখী প্রযুক্তিতে রূপ নেয়।


প্রাচীন গণনার যন্ত্র (আবাকাস, অ্যানালগ যন্ত্র)

কম্পিউটার আবিষ্কারের ইতিহাস শুরু হয় প্রাচীনকালের সহজ সরঞ্জাম থেকে। খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ২০০০ সালে চীনে আবাকাস আবিষ্কৃত হয় যা ছিল মানুষের ব্যবহৃত প্রথম গণনাযন্ত্র। 

এটি কাঠ বা বাঁশের ফ্রেমের মধ্যে দানা বা বল দিয়ে তৈরি হতো যা যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগসহ মৌলিক গাণিতিক কাজ করতে সাহায্য করত। 

পরবর্তীতে গ্রীসের অ্যান্টিকাইথেরা মেকানিজম ও বিভিন্ন অ্যানালগ যন্ত্র নক্ষত্রপুঞ্জ, জ্যোতির্বিজ্ঞান ও ক্যালেন্ডার হিসাব করার জন্য ব্যবহৃত হতো। এসব যন্ত্রই আধুনিক কম্পিউটারের প্রাথমিক ভিত্তি গড়ে তোলে।


যান্ত্রিক কম্পিউটারের ধারণা

১৭শ শতাব্দীতে কম্পিউটার বিকাশে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়। ব্লেইজ পাসকেল ১৬৪২ সালে তৈরি করেন পাসকেলিন নামক একটি যান্ত্রিক ক্যালকুলেটর যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে যোগ ও বিয়োগ করতে পারত। 

পরে গটফ্রিড উইলহেলম লেইবনিজ উন্নত সংস্করণ তৈরি করেন যেটি গুণ ও ভাগও করতে সক্ষম হয়। এভাবেই ধীরে ধীরে যান্ত্রিক কম্পিউটার তৈরির ধারণা শক্তিশালী হতে থাকে। 

পরবর্তী সময়ে চার্লস ব্যাবেজ “ডিফারেন্স ইঞ্জিন” ও “অ্যানালাইটিক্যাল ইঞ্জিন”-এর নকশা করেন যা আধুনিক কম্পিউটারের ভিত্তি স্থাপন করে।


চার্লস ব্যাবেজকে “কম্পিউটারের জনক” বলা হয়

চার্লস ব্যাবেজ ১৯শ শতকের ইংরেজ গণিতজ্ঞ ও প্রকৌশলী যিনি Difference Engine (২১–২২ সালের আশেপাশে ধারণা) ও পরবর্তীতে Analytical Engine এর নকশার মাধ্যমে আধুনিক কম্পিউটারের নীতিগত কাঠামো স্থাপন করেন। 

এনালিটিক্যাল ইঞ্জিনটি একটি সাধারণ-উদ্দেশ্যে (general-purpose) তৈরি যান্ত্রিক গণনাকারি হিসেবে পরিকল্পনা করা হয়েছিল।

এতে অঙ্কগত ইউনিট, নিয়ন্ত্রণ-প্রবাহ (শর্তভিত্তিক শাখা ও লুপ), মেমরি ও ইনপুট/আউটপুট ব্যবস্থার ধারণা ছিল। অর্থাৎ আধুনিক কম্পিউটারের মৌলিক উপাদানগুলোর বেশিরভাগই সেখানে ফুটে উঠেছিল। 

ব্যাবেজ নিজে এই বিশাল যন্ত্রটি পুরোপুরি নির্মাণ করতে পারেননি! কিন্তু তার ধারণা ও নকশা পরের শতকে ডিজিটাল কম্পিউটারের বিকাশে পথ দেখায়।


অ্যালান টিউরিং ও টিউরিং মেশিন

১৯৩৬ সালে অ্যালান টিউরিং তাঁর প্রবন্ধে Turing machine (a-machine) প্রস্তাব করেন। 

এটি একটি বিমূর্ত গণনাগত মডেল যা “কম্পিউটেবিলিটি” অর্থাৎ কোন কোন কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে যন্ত্র দ্বারা করা যেতে পারে তা নির্ধারণে ব্যবহৃত হয়। 

টিউরিং মেশিনের ধারণা ছিল তাত্ত্বিক, তবু এটি পরবর্তীতে প্রোগ্রামেবল কম্পিউটারের তত্ত্বগত ভিত্তি হিসেবে অমূল্য প্রমাণিত হয়। 

টিউরিং এর কাজ গণিত, তত্ত্বগত কম্পিউটার বিজ্ঞান ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেছে।


দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে কম্পিউটারের ব্যবহার: Colossus ও ENIAC

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে কোডব্রেকিং ও সামরিক গণনায় বড় মাপের ইলেকট্রনিক যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। ব্রিটেনে Colossus (১৯৪৩–১৯৪৫) তৈরি করা হয়েছিল টিউনি/লরেনজ এনক্রিপশনের বিশ্লেষণে সাহায্য করার জন্য।

এটি ভ্যাকুয়াম টিউব ব্যবহার করে বৈদ্যুতিকভাবে কাজ করত। যদিও স্টোরড-প্রোগ্রাম ধারণা না থাকায় সেটিকে কখনও কখনও “প্রথম ইলেকট্রনিক ডিজিটাল কম্পিউটার”ও বলা হয়।

একই সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ENIAC (১৯৪৫) নির্মিত হয় যা প্রচলিতভাবে প্রথম প্রোগ্রামযোগ্য সাধারণ উদ্দেশ্যে তৈরি ইলেকট্রনিক ডিজিটাল কম্পিউটার হিসেবে বিবেচিত। এটি গোলাবারুদ নির্ণয় সহ জটিল সংখ্যাসূচক সমস্যা দ্রুত সমাধান করত এবং পরে গাণিতিক ও বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ব্যবহার করা হয়। 

Colossus বনাম ENIAC এর মধ্যে “কোনটি প্রথম?” তা নিয়ে ঐতিহাসিক বিতর্ক রয়েছে। Colossus ছিল নির্দিষ্ট কোডব্রেকিং কাজে দ্রুততার জন্য তৈরি, আর ENIAC ছিল বিস্তৃত সংখ্যাসূচক কাজের জন্য পরিকল্পিত একটি সাধারণ-উদ্দেশ্যে তৈরি মেশিন।


কম্পিউটারের প্রজন্মভিত্তিক বিবর্তন


কম্পিউটারের ইতিহাসকে সাধারণত পাঁচটি প্রজন্মে ভাগ করা হয়। প্রতিটি প্রজন্মে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আকার, গতি, ক্ষমতা এবং কার্যকারিতায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। 

নিচে প্রজন্মভিত্তিক এই বিকাশ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

প্রথম প্রজন্ম (Vacuum Tubes: 1940-1956)

এই সময়ের কম্পিউটারগুলো ভ্যাকুয়াম টিউব ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছিল। এগুলো আকারে বিশাল, বিদ্যুৎ খরচ বেশি এবং রক্ষণাবেক্ষণ কঠিন ছিল। 

তবুও, এগুলোই আধুনিক ডিজিটাল কম্পিউটারের সূচনা ঘটায় এবং বৈজ্ঞানিক ও সামরিক গবেষণায় ব্যবহৃত হয়।

বৈশিষ্ট্য:

  • ভ্যাকুয়াম টিউব প্রযুক্তি
  • আকারে বড় ও ওজন বেশি
  • বিদ্যুৎ খরচ বেশি
  • অতিরিক্ত তাপ উৎপন্ন করত
  • নির্ভরযোগ্যতা কম

উদাহরণ:

  • ENIAC
  • UNIVAC I

দ্বিতীয় প্রজন্ম (Transistors: 1956-1963)

এই প্রজন্মে ভ্যাকুয়াম টিউবের পরিবর্তে ট্রানজিস্টর ব্যবহার শুরু হয়। ফলে কম্পিউটার ছোট হয়, দ্রুত কাজ করতে পারে এবং তাপ কম উৎপন্ন করে। 

এটি বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য প্রথম উপযোগী প্রজন্ম হিসেবে পরিচিত।

বৈশিষ্ট্য:

  • ট্রানজিস্টর প্রযুক্তি
  • আকার ছোট ও কার্যক্ষমতা বেশি
  • বিদ্যুৎ খরচ কম
  • ত্রুটি কম এবং নির্ভরযোগ্যতা বৃদ্ধি
  • বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত হতে শুরু করে

উদাহরণ:

  • IBM 1401
  • IBM 7090

তৃতীয় প্রজন্ম (Integrated Circuits: 1964-1971)

এই সময়ে ইন্টিগ্রেটেড সার্কিটের (IC) ব্যবহার শুরু হয় যা একাধিক ট্রানজিস্টরকে একটি ছোট চিপে একত্রিত করে। 

এর ফলে কম্পিউটারের গতি ও কার্যকারিতা বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। খরচও তুলনামূলকভাবে কমে যায়।

বৈশিষ্ট্য:

  • IC প্রযুক্তির ব্যবহার
  • আকার আরও ছোট ও শক্তিশালী
  • প্রসেসিং ক্ষমতা দ্রুত বৃদ্ধি
  • ব্যয় সাশ্রয়ী
  • সফটওয়্যার উন্নয়নে অগ্রগতি

উদাহরণ:

  • IBM 360
  • PDP-8

চতুর্থ প্রজন্ম (Microprocessors: 1971-Present)

১৯৭১ সালে মাইক্রোপ্রসেসর আবিষ্কারের মাধ্যমে কম্পিউটার বিপ্লব ঘটে। সম্পূর্ণ CPU একটি চিপে রাখা সম্ভব হয়, ফলে কম্পিউটার ছোট, শক্তিশালী এবং ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য সুলভ হয়ে ওঠে। 

এই প্রজন্ম এখনও চলমান।

বৈশিষ্ট্য:

  • মাইক্রোপ্রসেসর প্রযুক্তি
  • পার্সোনাল কম্পিউটারের আবির্ভাব
  • গতি, মেমরি এবং স্টোরেজে ব্যাপক উন্নতি
  • গ্রাফিকাল ইউজার ইন্টারফেস (GUI)
  • নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সংযোগ সুবিধা

উদাহরণ:

  • IBM PC
  • Apple Macintosh

পঞ্চম প্রজন্ম (Artificial Intelligence ও আধুনিক কম্পিউটার)

পঞ্চম প্রজন্মে কম্পিউটারকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ও সুপারকম্পিউটার প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। 

এই প্রজন্মে মেশিন লার্নিং, ডিপ লার্নিং, রোবোটিক্স, ক্লাউড কম্পিউটিং এবং কোয়ান্টাম কম্পিউটার নিয়ে কাজ চলছে।

বৈশিষ্ট্য:

  • কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) প্রযুক্তি
  • ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং
  • স্বয়ংক্রিয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ ক্ষমতা
  • ক্লাউড ও কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের উন্নয়ন
  • উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন সুপারকম্পিউটার

উদাহরণ:

  • IBM Watson
  • Google DeepMind
  • Fujitsu K Computer

প্রথম কম্পিউটার আবিষ্কার করেন কে?


কম্পিউটারের ইতিহাস জটিল এবং বহু স্তরের। একদিকে আছে যান্ত্রিক গণনার প্রচেষ্টা, অন্যদিকে আধুনিক প্রোগ্রামেবল কম্পিউটারের উদ্ভাবন। 

প্রযুক্তি এবং গণিতের প্রগতির সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলী এই যন্ত্রের বিকাশে অবদান রেখেছেন। তাই ‘প্রথম কম্পিউটার’ কাদের আবিষ্কার তা নির্ধারণ করা সবসময় সরল নয়।

চার্লস ব্যাবেজ: আধুনিক কম্পিউটারের মূল ভিত্তি

চার্লস ব্যাবেজকে সাধারণত “কম্পিউটারের জনক” বলা হয়। ১৯শ শতকের ইংরেজ গণিতজ্ঞ ও প্রকৌশলী তিনি। যেমনটি পূর্বেই বলা হয়েছে, ব্যাবেজ Difference Engine এবং Analytical Engine-এর ধারণা দেন। 

যদিও ব্যাবেজ সম্পূর্ণ মেশিনটি নির্মাণ করতে পারেননি, তার নকশা এবং তত্ত্ব আধুনিক কম্পিউটার সায়েন্সের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।

কনরাড জুসে: Z3, প্রথম প্রোগ্রামেবল কম্পিউটার

জার্মান প্রকৌশলী কনরাড জুসে ১৯৪১ সালে Z3 নামের যন্ত্রটি তৈরি করেন। এটি ছিল পুরোপুরি প্রোগ্রামেবল এবং বৈদ্যুতিকভাবে কাজ করা প্রথম কম্পিউটার। 

Z3-এর ডিজাইন সংখ্যার হ্যান্ডলিং, প্রোগ্রাম রেকর্ডিং এবং স্বয়ংক্রিয় হিসাব করার ক্ষমতা রাখে যা পরে আধুনিক কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্যগুলির সঙ্গে মিলে যায়।

জন অ্যাটানাসফ ও ক্লিফোর্ড বেরি: Atanasoff–Berry Computer (ABC)

১৯৩৭-১৯৪২ সালের মধ্যে জন অ্যাটানাসফ ও ক্লিফোর্ড বেরি Atanasoff–Berry Computer (ABC) উদ্ভাবন করেন। 

এটি একটি বৈদ্যুতিক এবং অ্যানালগ কম্পিউটারের সংমিশ্রণ যা বিশেষভাবে লিনিয়ার সমীকরণের সমাধানের জন্য তৈরি। 

যদিও এটি সাধারণ প্রোগ্রামেবল কম্পিউটার নয়, তবুও এটি কম্পিউটারের মৌলিক বৈদ্যুতিক এবং লজিক্যাল ধারণাগুলি প্রয়োগের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ।

দলিলভিত্তিক ভিন্নমত এবং ইতিহাসবিদদের বিশ্লেষণ

ইতিহাসবিদ ও প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা বিভিন্ন দলিলের ভিত্তিতে ভিন্নমত প্রকাশ করেছেন। 

কেউ ব্যাবেজকে প্রথম কম্পিউটারের জনক মনে করেন, কেউ Z3 কে প্রথম কার্যকর প্রোগ্রামেবল কম্পিউটার হিসেবে স্বীকৃতি দেন। 

আবার কিছু গবেষক ABC-কে বৈদ্যুতিক কম্পিউটারের পূর্বসূরি হিসেবে উল্লেখ করেন। 

সামগ্রিকভাবে বলা যায়, কম্পিউটার এর ইতিহাস একক আবিষ্কারের চেয়ে ধাপে ধাপে বিকাশের গল্প। বিভিন্ন বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীর অবদানের সমন্বয়েই আধুনিক কম্পিউটার গঠিত হয়েছে।


নিষ্কর্ষ


কম্পিউটারের ইতিহাস আমাদের শেখায় যে এটি কোনো একক আবিষ্কারের ফল নয়, বরং শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বৈজ্ঞানিক গবেষণা, উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতির ধাপে ধাপে বিকাশের ফল। 

চার্লস ব্যাবেজের নকশা, Z3-এর কার্যকারিতা, এবং ABC-এর বৈদ্যুতিক ধারণা, সব মিলিয়ে আধুনিক কম্পিউটারের ভিত্তি স্থাপন করেছে। 

আজকের দিনে কম্পিউটার শুধু গণনার যন্ত্র নয়, বরং শিক্ষা, গবেষণা, ব্যবসা, স্বাস্থ্য ও দৈনন্দিন জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ যা প্রযুক্তির ভবিষ্যতের দিকে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

Tasnia Afroz

Tasnia Afroz

Tasnia Afroz is an Associate Editor of The Sphere Chronicles. She is a passionate writer of Bengali Language with a deep interest in the intersection of technology and culture. As a key contributor to The Sphere Chronicles, she explores a wide range of topics and crafts stories that inform, inspire, and engage our audience.

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button